‘শুরা’ শব্দের অর্থ ‘পরামর্শ’। সুরা শুরা পবিত্র কোরআনের ৪২তম সুরা। এটি মক্কায় অবতীর্ণ। এর ৫ রুকু, ৫৩ আয়াত।
এই সুরায় আল্লাহর অস্তিত্ব ও মহিমা সম্পর্কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে যে ইসলাম কোনো নতুন ধর্ম নয়। ইসলাম এসেছে মানুষের ভাবনা ও বিশ্বাসচর্চার অবিচ্ছেদ্য ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায়। এই বিশ্বাসের বাণী অতীত ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নূহ, ইব্রাহিম, মুসা ও ঈসা (আ.)-র কাছেও এসেছে। নিরাকার আল্লাহ্র ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সরল পথ এবং জান্নাতের খবর দিয়ে সব বিবাদ পরস্পরের সঙ্গে পরামর্শ করে মীমাংসার আদেশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মানুষের অমঙ্গল তার নিজের কর্মফলে। আল্লাহর অনুগ্রহ ও শিক্ষায় মানুষের অমঙ্গলের প্রতিকার হয়। নির্ধারিত দিন আসার আগে আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দাও।
এ সুরায় বিশ্বাসীদের যে বৈশিষ্ট্যের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়েছে, তা হলো সবার সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করে যেকোনো কিছুর মীমাংসা করা। সুরার ৩৮ নম্বর আয়াতে ‘শুরা’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। তা থেকেই এই সুরার নাম।
এই সুরায় বিশ্বাসীদের কিছু গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, সেগুলো হলো: বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা রক্ষা, পাপ ও অকৃতজ্ঞতা পরিত্যাগ, উত্তম ও সুন্দর আচরণ—বিশেষ করে ক্ষমার চর্চা, আল্লাহর নির্দেশ নিঃশঙ্কভাবে এবং তৎপরতার সঙ্গে পালন, নামাজ প্রতিষ্ঠা এবং জাকাত আদায়ে সচেষ্টতা এবং সর্বোপরি সবার সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বলা হয়েছে, জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে কঠিন দুর্দশার পর। সন্তান নিয়ে মনস্তাপ করা উচিত নয়, কারণ সন্তান আল্লাহর দান। আল্লাহ ছেলে বা মেয়ে যা–ই দান করুর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো কর্তব্য। এমনকি আল্লাহ কাউকে নিঃসন্তান রাখলেও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা করা উচিত।
বিশ্বাসীদের আরও কয়েকটি গুণ সম্পর্কে বলা হয়েছে: তারা আল্লাহ্রর ওপর ভরসা রাখে এবং তার অনুগত থাকে; পাপ থেকে দূরে থাকে; কারও ওপর রাগ গেলেও তাকে ক্ষমা করতে পারে; নামাজে যত্নবান থাকে; পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করে; আল্লাহ্র দেওয়া সম্পদ তাঁর রাস্তায় ব্যয় করে; জুলুমবাজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে।
সুরার শুরুতে আল্লাহ বলেন, আগের নবীদের ওপরও ওহি নাজিল করা হয়েছে। কোরআন অবতীর্ণ করার উদ্দেশ্য মানুষকে জাহান্নামের শাস্তি এবং জান্নাতের উপহার সম্পর্কে জানানো, যাতে তারা সৎ কাজ করে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে।
একমাত্র সৃষ্টিকর্তা এবং রিজিকদাতা আল্লাহ। একমাত্র তিনিই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।
আল্লাহ বলেন, যে ধর্ম দিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে পাঠিয়েছেন, তিনি সে ধর্মে আহ্বানের পরও যারা বিতর্ক করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা কখনো বিজয়ী হয় না, মিথ্যা এক সময় মুছে যাবে।
এর পর আল্লাহ তাঁর অনন্ত ক্ষমাশীলতার কথা বলেছেন। মানুষ যত পাপীই হোক না কেন, সে অসৎ ও পাপকাজ বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ চিত্তে তওবা করলে তিনি সীমাহীন দয়ায় তাকে ঢেকে দেন এবং ক্ষমা করেন।
আল্লাহর নিদর্শন বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে। তাঁর কুদরতিতেই পাহাড়–সমান নৌযান সমুদ্রে ভেসে চলে। আল্লাহ বলেন, তিনি বাতাস বন্ধ করে দিলে নৌযান চলাচল বন্ধ, মানুষের চলমান জীবন রুদ্ধ এবং পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এর পর আল্লাহ বলেছেন, দুনিয়ার ধনসম্পদ আখিরাতের উপহারের তুলনায় তুচ্ছ।
আল্লাহ শাস্তির তিনটি স্তর বর্ণনা করেছেন: ন্যায়বিচার করা, অনুগ্রহ করা, জুলুম করা।
আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ ছাড়া অবিশ্বাসীদের কোনো আশ্রয়স্থল থাকবে না।
সুরার শেষে বলা হয়েছে, আল্লাহ সব ক্ষমতার মালিক এবং মানুষের সঙ্গে আল্লাহর কথা বলার পদ্ধতি তিনটি। এর বাইরে কোনো ব্যক্তি আল্লাহ্র সঙ্গে কথা বলার দাবি করলে সে মিথ্যাবাদী।