রাসুলে করিম (সা.) ও তাঁর বাণীকে উপহাস করতে গিয়ে একদিন আবু জেহেল বলেছিল, ‘মুহাম্মদ বলে আল্লাহ্র যেসব সৈন্যসামন্ত তোমাদের দোজখে শাস্তি দেবে এবং পৃথিবীতে থাকার সময় বন্দী করে রাখবে, তারা সংখ্যায় মাত্র উনিশ জন। আর তোমরা তো সংখ্যায় অনেক। তোমরা এক শ জন তাদের একজনের সমান নও, এটা কী করে হয়?’ সে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ প্রত্যাদেশ করলেন, ‘দোজখের প্রহরী আমরা ফেরেশতাদের বানিয়েছি এবং তাদের সংখ্যা সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের পরীক্ষাস্বরূপ রেখেছি...’ এই রুকুর শেষ পর্যন্ত। এই আয়াত নামাজের মধ্যে রাসুলে করিম (সা.) যখন আবৃত্তি করছিলেন, ওখন ওরা সব পালিয়ে গিয়েছিল। ওরা তা কিছুতেই শুনবে না।
নামাজের মধ্যে রাসুলের ওই আবৃত্তি কেউ শুনতে চাইলে তা চুরি করে শুনতে হতো কোরাইশদের ভয়ে। আর তবু যদি কেউ টের পেত যে সে গোপনে শুনেছে, এটা তারা জানতে পেরেছে, তাহলে সে পালিয়ে যেত। এবং আর কোনো দিন সে শুনতে আসত না। রাসুলে করিম (সা.) যদি স্বর নিচু করে পড়তেন, তাহলে গোপন শ্রোতা ভাবত অন্যরা তো এসব শুনতে পাবে না, অথচ সে দিব্যি শুনতে পাচ্ছে। অবশ্য সমস্ত কান পেতে তাকে শব্দগুলোকে ধরতে হতো।
আমর ইবনে উসমানের মুক্তি পাওয়া দাস দাউদ ইবনে আল-হুসায়ন আমার কাছে বলেছেন, ইবনে আব্বাসের মুক্ত দাস ইকরিমা তাদের বলেছে, আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস তাদের বলেছেন যে, ওই সব লোকের উদ্দেশ করেই প্রত্যাদেশ এসেছিল, ‘নামাজে উচ্চস্বরে সুরা পড়বে না, আবার ফিসফিস করেও পড়বে না, মধ্য পন্থা অবলম্বন করবে।’ তিনি বলেছেন, ‘নামাজে উচ্চস্বরে সুরা পড়বে না’, তাহলে তারা চলে যাবে। ‘আবার নিঃশব্দেও পড়বে না,’ কারণ তাহলে যারা শুনতে চায়, গোপনে যারা শুনতে আসে তারা শুনতে পাবে না। শুনতে পেলে হয়তো কোনো কোনো কথা তাদের মনে ধরবে এবং তাতে লাভবান হবে।
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে