পবিত্র কোরআনের ১৮ তম সুরা আল কাহাফ। কাহাফ মানে গুহা। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ১১০। মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় গুহাবাসীদের বিবরণ স্থান পেয়েছে। সরল পথের আলোচনা করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। জ্ঞানান্বেষণে এক আল্লাহভক্ত মহাপুরুষের সাক্ষাৎ এবং জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজের বিবরণ রয়েছে।
কোরআনে আছে, তুমি তোমার কাছে তোমার প্রতিপালক যে কিতাব পাঠিয়েছেন, তার থেকে আবৃত্তি করো। তাঁর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই। তুমি কখনোই তাঁকে ছাড়া অন্য কোনো আশ্রয় পাবে না। তুমি তাদের সঙ্গে থাকবে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আর তাদের ওপর থেকে তুমি চোখ ফিরিয়ে নিয়ো না পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে। আর যার হৃদয়কে আমি অমনোযোগী করেছি আমাকে স্মরণ করার ব্যাপারে, যে তার খেয়ালখুশির অনুসরণ করে আর যার কাজকর্ম সীমা ছাড়িয়ে যায় তাকে তুমি অনুসরণ কোরো না। বলো, ‘সত্য তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে; যার ইচ্ছা সে বিশ্বাস করুক আর যার ইচ্ছা সে অবিশ্বাস করুক।’ আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য আগুন তৈরি করে রেখেছি, যার বেড় ওদেরকে ঘিরে থাকবে। ওরা পান করতে চাইলে ওদের দেওয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা ওদের মুখ পুড়িয়ে দেবে। কী ভীষণ সে পানীয়! আর কী খারাপ সে আশ্রয়। যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি; যে সৎকর্ম করে আমি তার শ্রমফল নষ্ট করি না। ওদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত, যার নিচে নদী বইবে। সেখানে ওদেরকে স্বর্ণ কঙ্কণে অলংকৃত করা হবে, ওরা পরবে মিহি রেশম ও পুরু মখমলের সবুজ পোশাক আর বসবে সুসজ্জিত আসনে, কত সুন্দর পুরস্কার আর কত সুন্দর আরামের স্থান! (সুরা কাহাফ, আয়াত ২৭ থেকে ৩১)
এক ব্যক্তির সুন্দর একটি বাগান ছিল। কিন্তু লোকটি ছিলেন অহংকারী। পবিত্র কোরআনে আছে, ‘আর তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল, তারপর কথায় কথায় সে তার বন্ধুকে বলল, ধনসম্পদে আমি তোমার থেকে বড় এবং জনবলেও তোমার চেয়ে শক্তিশালী’। অহংকারী হয়ে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যাওয়ায় আল্লাহ তাঁর বাগান ধ্বংস করে দেন। ঘটনাটি তাদের জন্য, যারা নিজের অহংবোধে আল্লাহর নিয়ামতের কথা ভুলে যায়। তারা ভুলে যায় যে আল্লাহ চাইলেই মুহূর্তে তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিতে পারেন।
কোরআনে আছে, তুমি ওদের কাছে একটি উপমা বয়ান করো, দুই ব্যক্তির উপমা। ওদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দুটি আঙুরের বাগান আর এ দুটিকে আমি খেজুরগাছ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম, আর দুয়ের মধ্যে দিয়েছিলাম শস্যখেত। দুটি বাগানই ফল দিত ও তাতে কোনো কসুর করত না। আর দুইয়ের ফাঁকে ফাঁকে আমি নদী বইয়ে দিয়েছিলাম। আর তার প্রচুর ধনসম্পদ ছিল। তারপর কথায় কথায় সে তার বন্ধুকে বলল, ‘ধনসম্পদে আমি তোমার থেকে বড় ও জনবলেও তোমার চেয়ে শক্তিশালী।’ এভাবে নিজের ওপর অত্যাচার করে সে তার বাগানে ঢুকল। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে এ কখনো ধ্বংস হবে। ‘আমি মনে করি না যে কিয়ামত হবে।
আর যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নেওয়াই হয়, তবে আমি তো নিশ্চয়ই এর চেয়ে ভালো জায়গা পাব।’ তার সঙ্গী তার তর্কের উত্তরে তাকে বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তারপর শুক্র থেকে আর তারপর পূর্ণ করেছেন মানুষের অবয়বে?’ আল্লাহই আমার প্রতিপালক ও আমি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরিক করি না। তুমি যখন ধনে ও সন্তানে আমাকে তোমার চেয়ে কম দেখলে, তখন তোমার বাগানে ঢুকে তুমি কেন বললে না, ‘আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো শক্তি নেই।’ আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে আরও ভালো কিছু দেবেন ও তোমার বাগানে আকাশ থেকে আগুন ঝরাবেন, যার ফলে তা গাছপালাশূন্য মাটি হয়ে যাবে বা ওর পানি মাটির নিচে হারিয়ে যাবে, আর তুমি কখনো তাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’ তার ফলগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। আর সেখানে যা সে ব্যয় করেছিল, তা মাচাসমেত যখন পড়ে গেল, তখন সে হাত মুচড়ে আক্ষেপ করতে লাগল। সে বলতে লাগল, ‘হায়! আমি যদি কাউকে আমার প্রতিপালকের শরিক না করতাম!’ আর আল্লাহ ছাড়া তাকে সাহায্য করার কোনো লোক ছিল না এবং সে নিজেও কোনো সুরাহা করতে পারল না। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকত্বের অধিকার সেই আল্লাহর, যিনি সত্য। পুরস্কার দানে ও পরিণাম-নির্ণয়ে তিনি শ্রেষ্ঠ। (সুরা কাহাফ, আয়াত ৩২ থেকে ৪৪)