আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) ছিলেন প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)–এর মেয়ে। আয়েশা (রা.)–এর গায়ের রং ছিল সাদা ও লালের মিশ্রণে। তাই তাঁকে ‘হুমায়রা’ বলেও সম্বোধন করা হতো।
আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে তিনি ইসলাম সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তিনি ইতিহাস ও সাহিত্যের জ্ঞানার্জন করেছিলেন তাঁর বাবার কাছ থেকে। চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাসুল (সা.)–এর দরবারে আসা আরব গোত্রের প্রতিনিধিদলের কাছ থেকে।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)–কে বিয়ে করার আগে রাসুল (সা.) এর সুসংবাদ পেয়েছিলেন। একদিন তিনি স্বপ্নে দেখেন, একজন ফেরেশতা একখণ্ড রেশমি কাপড়ে কিছু একটা মুড়ে এনে বলল, ‘এ আপনার স্ত্রী।’ রাসুল (সা.) সেটি খুলে দেখলেন তার মধ্যে আয়েশা (রা.)। (মুসলিম, হাদিস: ২,৪২৮)
আয়েশা (রা.) মহানবী (সা.)–এর স্নেহ, ভালোবাসা ও শিক্ষার নিবিড় সংস্পর্শে বড় হয়েছিলেন। রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)–কে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। তাঁদের দাম্পত্যজীবনে ছিল পারস্পরিক সহমর্মিতা, আবেগ ও নিষ্ঠা।
আয়েশা (রা.)–কে খুশি করার জন্য রাসুল (সা.) তাঁকে মাঝেমধ্যে গল্পও শোনাতেন। কখনো আবার আয়েশা (রা.)–র গল্পও শুনতেন।
একবার আয়েশা (রা.) রাসুল (সা.)–এর সফরসঙ্গী ছিলেন। চলার পথে রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.)–কে বললেন, ‘এসো, আমরা দৌড় প্রতিযোগিতা করি।’ প্রতিযোগিতায় জয়ী হন আয়েশা (রা.)। এর কিছুদিন পর আবার তাঁরা দুজন দৌড় প্রতিযোগিতা করেন। সেদিন রাসুল (সা.) জয়ী হন। রাসুল (সা.) মজা করে বললেন, ‘এটা হলো ওই দিনের প্রতিশোধ।’ (আবু দাউদ)
রাসুল (সা.) আর আয়েশা (রা.) একই পাত্রে খাবার খেতেন। দুজন গ্লাসের একই দিকে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতেন।
উরওয়া (র.) বলেন, ‘আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানে আয়েশা (রা.)–র চেয়ে দক্ষ কাউকে দেখিনি। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘খালা, আপনি এই জ্ঞান কোত্থেকে পেলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি মানুষকে রোগীর চিকিৎসা করতে দেখে তা মনে রেখেছি।’
আয়েশা (রা.)–এর জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা ছিল অতুলনীয়। তাঁর ছিল গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং তা প্রকাশের দক্ষতা। ইসলামের তাৎপর্য বিষয়ে গভীর জ্ঞান নিয়ে তিনি সুন্দর পর্যালোচনা করতেন।
আয়েশা (রা.) প্রতি বছর হজে যেতেন। হেরা ও সাবির পর্বতের মাঝখানে তাঁর তাঁবু স্থাপন করা হতো। দূরদূরান্তের জ্ঞানপিপাসুরা সেই তাঁবুর পাশে ভিড় জমাতেন। তিনি তাঁদের যেকোনো ধরনের প্রশ্ন করতে উৎসাহ দিতেন। শুধু নারীদেরই নয়, পুরুষদেরও তিনি শিক্ষা দিতেন। আবু মুসা আশয়ারী (রা.) বলেন, ‘যখনই কোনো হাদিস নিয়ে আমাদের সমস্যা হতো, আয়েশা (রা.)–কে জিজ্ঞেস করলে আমরা তার সমাধান পেয়ে যেতাম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৮৩)
আয়েশা (রা.)–র বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০টি।
আয়েশা (রা.) তো সুবক্তা ছিলেনই, তাঁর মধ্যে কাব্যজ্ঞানও ছিল। বাবা আবু বকর (রা.)–এর মৃত্যুর পর তিনি একটি শোকগাথা রচনা করেন।
আয়েশা (রা.) উহুদ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যরা যখন প্রায় পর্যুদস্ত, তেমন ঝুঁকির মধ্যেও আয়েশা (রা.) দৌড়ে দৌড়ে আহত সৈনিকদের পানি পান করান।
রাত ও দিনের বেশির ভাগ সময় তিনি ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। চাশতের নামাজ নিয়মিত আদায় করতেন। রাতে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ পড়তেন। নিজেকে তিনি খুব সাধারণ মনে করতেন। তাঁর সামনে নিজের প্রশংসাকে তিনি মোটেই পছন্দ করতেন না।
দানের ক্ষেত্রে আয়েশা (রা.)–এর হাত ছিল খোলা। আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা) তাঁর মা ও খালার দানের বর্ণনা করেছেন এভাবে: ‘আমি আমার মা ও খালা আয়েশা (রা.)–র চেয়ে বেশি দানশীল কোনো নারীকে দেখিনি। তাঁদের দুজনের দানের প্রকৃতির মধ্যে কিছু ভিন্নতা ছিল। আমার খালা আয়েশার স্বভাব ছিল তিনি প্রথমে বিভিন্ন জিনিস একত্র করতেন। যখন দেখতেন তা যথেষ্ট পরিমাণ জমা হয়েছে, তখন তিনি তা দান করে দিতেন। কিন্তু আমার মা আসমার স্বভাব ছিল ভিন্নরূপ। তিনি পের দিন পর্যন্ত কোনো জিনিস জমা রাখতেন না।’ (বুখারি, হাদিস: ২,৫৯০)
মহানবী (সা.)–এর মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত আয়েশা (রা.) তাঁর পাশে ছিলেন। তাঁদের দাম্পত্যজীবন ছিল ৯ বছরের। এই ৯ বছরে তিনি রাসুল (সা.)–এর কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কোরআন, হাদিস, তাফসির ফিকহ ও ফতোয়া ইসলামি শিক্ষার সব বিভাগেই তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। হজরত আবু বকর (রা.), হজরত উমার (রা.) ও হজরত উসমান (রা.)–এর খিলাফতকালে তিনি ফতোয়া দিতেন।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) ৫৮ হিজরির ১৭ রমজান মদিনায় ইন্তেকাল করেন। জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।