আশুরার দিনে কী ঘটেছিল

হিজরি সনের প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। কারবালার শোকাবহ পর্বটি ছাড়াও এই দিনে আরও বহু অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

এই দিনটিতে সৃষ্টি করা হয় আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-কে। এই একই দিনে তাঁকে বেহেশতে পাঠানো হয়, বেহেশত থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করানো হয়, হাওয়ার সঙ্গে তাঁকে আরাফাতের ময়দানে একত্র করা হয় ও তাঁদের ভুল-ত্রুটি মার্জনা করা হয়।

নমরুদের বাহিনী যখন মুসলিম জাহানের পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে, আল্লাহ তাঁর অশেষ মেহেরবানিতে সেখান থেকে তাঁকে মুক্তি দেন।

একই দিনে হজরত মুসা কালিমুল্লাহ (আ.) নীল নদ পার হয়ে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি পান। ফেরাউন দলবলসহ নীল নদে ডুবে মারা যায়।

এই দিনেই দীর্ঘ সময় প্রবল বন্যার পর হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে ঠেকে। তিনি ও তাঁর অনুসারীরা বেঁচে যান।

একই দিনে হজরত ইউনুস (আ.) রাতের অন্ধকারে, পানির গভীরে ও মাছের পেটে—এই তিন স্তরের অন্ধকার থেকে মুক্তি পান।

এই দিনেই হজরত আইউব (আ.) সুদীর্ঘ ১৮ বছর রোগভোগের পর পূর্ণ সুস্থতা লাভ করেছিলেন।

হজরত ঈসা মাসিহ (আ.) এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। আল্লাহর অশেষ কুদরতে তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়, যা পবিত্র কোরআনে সুরা আলে ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

এই দিনেই হজরত মুসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে তুর পাহাড়ে গিয়ে কথা বলেন। আল্লাহ্‌র কাছ থেকে ঐশী গ্রন্থ তাওরাত লাভ করেন।

এই দিনেই হজরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর অতি স্নেহের সন্তান, হজরত ইউসুফ (আ.)-কে বহুকাল পরে ফিরে পান। তাঁর সন্তান হারানো বেদনার অবসান হয়।

এই দিনেই হজরত সোলায়মান (আ.)–এর সিংহাসনে অভিষেক হয়। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনি সৈন্যসামন্ত নিয়ে এক মাসের ভ্রমণে বের হতেন, যা পবিত্র কোরআনের সুরা সাবার ১২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

এই দিনেই আল্লাহ তাআলা এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলে করিম (সা.) হিজরত করে মদিনায় আসার পর দেখলেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা রাখে। নবী (সা.) কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, এই দিনে হজরত মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইল শক্রবাহিনী থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, তাই এই দিন হজরত মুসা (আ.)–এর শুকরিয়া আদায় করতে তারা রোজা রেখেছেন শুনে রাসুলে (সা.) বললেন, হজরত মুসা (আ.)-এর অনুসরণের ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে বেশি হকদার। তাই এই দিনে তিনি রোজা রেখে অন্যদেরও রোজা রাখার হুকুম দেন।

শুধু আশুরার দিনে রোজা রাখলে বাইরে থেকে ইহুদিদের অনুকরণ বলে মনে হওয়ার কারণে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো। আর ইহুদিদের সাদৃশ্য ত্যাগ করো।’ অর্থাৎ আশুরার আগে বা পরে তিনি আরও এক দিন রোজা রাখতে বলেছেন।

হজরত হাফসা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) চারটি কাজ কখনো ত্যাগ করেননি: ১. আশুরার রোজা, ২. জিলহজের প্রথম ৯ দিনের রোজা, ৩. আইয়ামে বিজের রোজা, অর্থাৎ প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখের রোজা, ৪. ফজর ওয়াক্তে ফরজের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ।

হজরত কাতাদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহর অসিলায় অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন। (তিরমিজি শরিফ)