মরক্কোয় কামানের শব্দে ফতুর শুরু

আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ মরক্কো। মরক্কোতে ইফতারকে বলে ফতুর। কামানের শব্দে সেখানে ফতুর শুরু হয়। নানা আচার–অনুষ্ঠান দিয়ে রমজানকে তারা স্বাগত জানায়। মরক্কোবাসী রমজানকে স্বাগত জানাতে এক মাস আগে প্রস্তুতি নেন।

শাবান মাস থেকে মসজিদ ও বাড়িঘর তাঁরা পরিষ্কার করেন। সংযোজন করেন নতুন আসবাব। আর নিজেদের জন্য কেনেন মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। কমবেশি সবাই এই পোশাক পরে মসজিদে তারাবিহ আদায় করতে ও ঈদের নামাজ পড়তে যান।

ইফতারের সময় জানাতে তাঁরা কামান দাগেন। কামানের শব্দ শুনে মরক্কোর মানুষ রোজা ভাঙেন। এটি তাঁদের ঐতিহ্যবাহী একটি রীতি। সাহ্‌রিতে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার জন্য নাফর নামক একটি দল তৈরি হয়। নাফররা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে রাস্তায় যেতে যেতে সাহ্‌রির সময় বলতে থাকে। সঙ্গে তিলাওয়াত করে গজল। আর ফুঁ দিতে থাকেন শিঙায়। সে শব্দ শুনে মানুষ ঘুম থেকে উঠে সাহ্‌রি খান। এ জন্য নাফররাদের রমজানের পরে সম্মানী দেওয়া হয়।

ইফতার আয়োজনে মরক্কোবাসীর প্রথম পছন্দ হারিরা স্যুপ। হারিরা স্যুপ প্রস্তুত করা হয় টমেটো, ছোলা, মসুরের ডাল ও গোশতের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে। চেবাকিয়া হালুয়া ইফতারের অন্যতম খাবার। চেবাকিয়া হালুয়া মরক্কোর ঐতিহ্যবাহী হালুয়া। এটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় আটা, ময়দা, তিল, ঘি, মধু ও বিভিন্ন ফুলের রস। এ ছাড়া ইফতারের টেবিলে থাকে শাবাকিয়া পিঠা, সেদ্ধ ডিম, মিষ্টি, পাস্তা, ভাজা মাছ ও বিভিন্ন প্যানকেক।

তারাবিহর পরে বাড়ির সবাই মিলে চা, কফি, দুধ, শরবত ইত্যাদি পান করেন। ইসলামের নানা গল্প শুনে পার করে দেন সময়। মরক্কোর ঐতিহ্যের অংশ হলো রমজানে সবাই পরিবারের কাছে থাকেন।

মরক্কোতে শিশুদের রোজা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়। একে তাদের ভাষায় ‘তাখইয়াতুন নাহার’ বলে। রোজা রাখার জন্য শিশুদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকও পরানো হয়, যাতে তারা বুঝতে পারে রোজা আসছে। যেসব বাচ্চারা রোজা রাখে, তাদের পরিবার তাদের পুরস্কৃতও করে থাকে।

২৭ রমজান রাতে লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় অনুষ্ঠান করে থাকেন মরক্কোবাসী। নারীরা কিসকিস নামের একজাতীয় মিষ্টান্ন তৈরি করে মুসল্লিদের জন্য মসজিদে পাঠান। রাতের জন্য তাঁরা তাঁদের ঘরবাড়ি সাজিয়ে তোলেন। ছোট ছোট মেয়ে নববধূর মতো সাজসজ্জা করে উল্লাস করে।