হজরত মুসা (আ.) তাঁর তরুণ বয়স পর্যন্ত বেড়ে উঠেছিলেন ফেরাউনের প্রাসাদে। তাঁর হাতে একজন কিবতির অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু হয়। ফেরাউন ছিলেন নির্মম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হত্যার অভিযোগ এনে ফেরাউন হজরত মুসা (আ.)–কে ফেরাউন হত্যা করে ফেলে কিনা, এই নিয়ে তিনি ভীত ছিলেন। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।
গর্ব ও অহংকারে ফেরাউন আল্লাহকে মানতে চাইতেন না। প্রজাদের কাছে নিজেকে তিনি খোদা বলে দাবি করতেন। ধন–সম্পদে, সৈন্য–সামন্তে ও জাঁকজমকের সারা দুনিয়ায় তার সমতুল্য আর কেউই ছিল না। তাঁকে হেদায়াত করার জন্য আল্লাহ হজরত মুসা (আ.)–কে নির্দেশ দিলেন। মুসা (আ.) তাঁর কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বললেন,
‘হে আমার প্রতিপালক, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও, আর আমার কাজ সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও, যাতে ওরা আমার কথা বুঝতে পারে। আর আমার আত্মীয়দের মধ্য থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী দাও।’ (সুরা তাহা, আয়াত: ২৫-২৯)
শৈশবে একবার হজরত মুসার (আ.) সামনে খেজুর ও জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা হয়েছিল। তিনি অঙ্গার উঠিয়ে নিয়ে মুখে পুরে দিয়েছিলেন। এতে তাঁর জিভ পুড়ে আড়ষ্ট হয়ে যায়। ফেরাউন বলেছিলেন, কে উত্তম—আমি না এই লোকটা? ও তো গরিব ও তুচ্ছ; স্পষ্টভাবে কথাও বলতে পারে না।
হজরত হাসান বসরি (র.) বলেন, হজরত মুসা (আ.) জিভের জড়তা কাটানোর জন্য যে প্রার্থনা করেছিলেন তা পূর্ণ হয়েছিল।
এর পর হজরত মুসা (আ.) দোয়া করেন যাতে তাঁর ভাই হারুন (আ.)–কেও নবী করে দেওয়া হয়। তাঁর এই দোয়াও আল্লাহ মঞ্জুর করেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, তখন–তখনই হজরত হারুন (আ.)–কে নবুওয়াত দেওয়া হয়।
হজরত মুসা (আ.) বলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো আমাদের অন্তর্দ্রষ্টা। আপনার আমাদের প্রতি বিনীত যে আমাদের নবী হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং আপনার শত্রু ফেরাউনকে হিদায়াত করার জন্য আমাদের তার কাছে পাঠিয়েছেন। আমরা আপনারই কৃতজ্ঞতা জানাই। সব প্রশংসা আপনার।
হজরত উরওয়া (রা.) বর্ণনা থেকে আরেকটি তথ্য জানা যায়। একবার হজরত আয়েশা (রা.) ওমরাহ করার সময় এক বেদুঈনের বাড়িতে ছিলেন। সে সময়ে তিনি একটি আলোচনা শুনতে পান। একজন লোক প্রশ্ন করল, দুনিয়ায় কোন ভাই তার নিজের ভাইকে সবচেয়ে বেশি উপকার করেছিলেন? প্রশ্নটি শুনে সবাই করে থেকে বলে, আমাদের জানা নেই। ওই লোকটি তখন বলে, আল্লাহর শপথ, আমি জানি। এখানে ভাইয়ের নবুয়তের জন্য আল্লাহ্র কাছে হজরত মুসা (আ.) দোয়ার ঘটনাটি সম্পর্কে ইঙ্গিত আছে।