ইসলামের একটি বিশেষ দিক হলো এটি মানুষকে গোড়া থেকে পরিবর্তন করে দেয়। অনেক সাহাবি ও তাবেয়ি এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছেন। যাঁরা ইসলাম গ্রহণ করে বড় মাপের মানুষ হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের অতীত ভালো ছিল না। অনেক সাহাবি প্রাথমিক জীবনে খুবই মন্দ কাজে লিপ্ত ছিলেন।
হাদিস থেকে জানা যায়, এক সাহাবি লোকলজ্জার ভয়ে তাঁর কন্যাকে কুয়ায় ফেলে দিয়েছিলেন। অনেক সাহাবি জিনা ও মদ্যপানে অভ্যস্ত ছিলেন। ইসলাম তাঁদের সবাইকে পরিবর্তন করে দিয়েছিল।
আজকে যাঁর কথা বলব, তিনি ছিলেন একজন তাবেয়ি। তাঁর নাম ছিল ফুদাইল ইবনে আয়াদ (র.)। তাঁকে বলা হতো ‘ইমামুল হারাইম’, অর্থাৎ ‘দুই পবিত্র হারামের ইমাম’। ইসলামি জ্ঞানে তাঁর দক্ষতার জন্য এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
প্রাথমিক জীবনে ফুদাইল (র.) ছিলেন একজন ডাকাত। সিরিয়া ও খোরাসানের (পারস্যের কিছু অঞ্চল) মহাসড়কে তিনি পথিকদের আটক করে মালামাল ছিনিয়ে নিতেন। আটক নারীদের সঙ্গে জিনায় লিপ্ত হতেন।
এক নারীর সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্ক ছিল। ডাকাতি থেকে ফেরার পথে প্রতি রাতে তিনি সেই নারীর কাছে যেতেন।
ফুদায়িল (র.) বলেন, ‘এক রাতে আমি আবারও সেই নারীর কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। কাছাকাছি পৌঁছানোর পর এক ব্যক্তির গলার আওয়াজ কানে এল। লোকটি কোরআন পাঠ করছিলেন, ‘যারা বিশ্বাস করে, তাদের অন্তর কি এখনো বিগলিত হয়নি, আল্লাহর স্মরণে এবং তিনি যে সত্য অবতীর্ণ করেছেন তার জন্য? তারা যেন তাদের মতো না হয় যাদেরকে আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল। অতঃপর লম্বা সময় অতিক্রান্ত হলে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে যায়। তারা অধিকাংশই পাপাচারী।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত: ১৬)
আয়াত শুনে ফুদায়িল (রহ.)–এর বুক কেঁপে উঠল। তিনি বলতে লাগলেন, ‘হে আমার রব, এখনই সময়, এখনই সময়।’
তিনি সেদিন আর সেই নারীর কাছে গেলেন না। ফেরার পথে তিনি দেখলেন পাশ দিয়ে দুটি কাফেলা যাচ্ছে। একটি দল আরেক দলকে বলছে, ‘এই পথ দিয়ে গেলে ফুদায়িল তোমাদের ওপর আক্রমণ করবে। এই পথ দিয়ে যেয়ো না।’
ফুদায়িল (র.) সবই শুনছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার চোখে তখন পানি এসে গেল। আমি আমার দাড়ি চেপে ধরে বললাম, এত দিন আমি আল্লাহর অবাধ্যতায় রাত পার করেছি, আজ মুসলিমরাও আমাকে ভয় পাচ্ছে। আল্লাহই আমাকে এই কথাগুলো শুনিয়েছেন, তিনি চাইছেন, আমি যেন ফিরে আসি।’
এরপর তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ আমি তওবা করছি, আমি খারাপ কাজে ফিরে যাব না। বাকি জীবন আপনার প্রিয় বান্দাদের কাছাকাছি থাকতে চাই।’
ফুদাইদ (র.) এরপর মক্কায় চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে সময়ের বড় বিজ্ঞজনদের সান্নিধ্য লাভ করলেন। তাদের থেকে জ্ঞান শিক্ষা নিলেন। একটা সময় পর তিনিই হয়ে গেলেন মক্কার সবচেয়ে বড় পণ্ডিত।
প্রায়ই তিনি আগের জীবনের কথা স্মরণ করতেন। এত দিন তিনি যাঁদের ক্ষতি করেছেন, তাঁদের কাছে গিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে চাইতেন। তাঁকে মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন। এত কিছু সম্ভব হয়েছিল শুধু একটি আয়াতের কল্যাণে।
অনুবাদ: সাজিদ আল মাহমুদ