কোরআন নাজিলের মাস রমজান

পবিত্র রমজান মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল–কোরআন, মানুষের জন্য হিদায়াত রূপে এবং পথনির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৮৫)।’

কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব, যা সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর নাজিল হয়েছে। এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোনো কিতাব ও নতুন কোনো নবী বা রাসুল আসবেন না; এটিই কিয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের জন্য দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ।

কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ব্যতিরেকে প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিহভাবে কোরআন তিলাওয়াত শিখতে হবে। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন।

কোরআন নাজিলের কারণেই শবে কদরের ফজিলত আমরা জানতে পেরেছি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি (সুরা-৯৭, আয়াত: ১)।’ যে মানুষ যত বেশি কোরআনের ধারক–বাহক হবেন, তাঁর সম্মানও তত বেশি হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেন পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ ‘হাশরে বিচারের দিনে কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে হুজ্জত হবে (মুসলিম)।’

কোরআন অর্থ পড়া, পাঠ করা, পাঠযোগ্য, যা বারবার পাঠ করা হয়। কোরআন মজিদ দুনিয়ার সর্বাধিক পঠিত, সর্বাধিক ভাষায় অনূদিত ও সর্বাধিকসংখ্যক প্রকাশিত গ্রন্থ। যারা কোরআন তিলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কিয়ামতে আল্লাহর আদালতে প্রিয় রাসুল (সা.) অভিযোগ করবেন। রাসুল আকরাম (সা.) বলবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল (সুরা-২৫ ফুরকান, আয়াত: ৩০)।’

কোরআন মজিদ শিক্ষা করা ফরজ, শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গুনাহ হয়; অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা জরুরি। যাঁরা পড়তে জানেন না, তাঁদের শিখতে হবে, যাঁরা শিখে ভুলে গেছেন, তাঁদের পুনরায় পড়তে হবে; যাঁরা ভুল পড়েন, তাঁদের সহিহভাবে পড়া শিখতে হবে।

তিন ধরনের লোকের তিলাওয়াতের ভুল মাফ হবে: যাঁরা সহিহ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, যাঁরা সহিহ করার চেষ্টায় রত আছেন, যাঁদের সহিহ শিক্ষার সুযোগ নেই বা সহিহ ও ভুলের জ্ঞান নেই।

কোরআন করিম অধ্যয়ন, অনুশীলন ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েই পাঠানো হয়েছিল প্রিয় নবী (সা.)–কে। হজরত ইবরাহিম (আ.) দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি তাদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে এমন রাসুল পাঠান, যিনি আপনার আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, কিতাব ও হিকমাত শেখাবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৯)।’

কোরআন তিলাওয়াত করা এবং তিলাওয়াত শোনা ও শোনানো ইবাদত। নবী আকরাম (সা.) নিজে পাঠ করে সাহাবিদের শোনাতেন এবং সাহাবিদের তিলাওয়াতও শুনতেন। প্রতি রমজান মাসে এর আগে যতটুকু কোরআন নাজিল হয়েছে তা নবীজি (সা.) হজরত জিবরাইল (আ.)–কে শোনাতেন এবং হজরত জিবরাইল (আ.)–ও তা নবীজিকে শোনাতেন। নবীজি (সা.) জীবনের শেষ রমজানে উভয়ে উভয়কে দু–দুবার করে পূর্ণ কোরআন পাঠ করে শোনান (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

কোরআন মজিদ বুঝে পড়লে অনেক বেশি নেকি বা সওয়াব। না বুঝে পড়লেও সওয়াব রয়েছে। রমজানে প্রতিটি আমলের প্রতিদান সত্তর থেকে সাত শ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজানে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা বিশেষ ফজিলতপূর্ণ সুন্নত আমল। সাহাবায়ে কিরাম কোরআন বুঝতেন এবং বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন। বিশিষ্ট সাহাবিরা প্রায় প্রতি সাত দিনে এক খতম কোরআন পড়তেন বলে সাত মঞ্জিল হয়েছে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com