আমরা প্রায়ই নামাজে গভীর মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হই। কিন্তু নামাজের পূর্ণতার জন্য গভীর মনোযোগ একান্ত জরুরি। নামাজে আমরা যা বলি, তার অর্থ যদি জানা থাকে, তাহলে নামাজে অন্য চিন্তা মাথায় আসবে না। নামাজে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকবিরে তাহরিমার সময় দৃষ্টি সেজদার জায়গায় রাখতে হবে। দাঁড়ানো অবস্থায়ও দৃষ্টি সেজদার জায়গায় রাখতে হবে।
এরপর রুকু অবস্থায় দৃষ্টি পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে; পুনরায় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায়; সিজদা অবস্থায় দৃষ্টি নাকের আগায়; বসা অবস্থায় দৃষ্টি নাভিতে রাখতে হবে। সালাম দেওয়ার সময় দৃষ্টি কাঁধে নিবদ্ধ থাকবে। এভাবে নামাজ আদায় করলে মনোনিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। নামাজের প্রকৃত উদ্দেশ্যও সফল হবে।
নামাজে দাঁড়িয়েই প্রথমে আমরা বলি ‘আল্লাহু আকবার’—অর্থ আল্লাহ মহান!
তারপর সানা পড়ি: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তোমার নাম বরকতময়, তোমার গৌরব অতি উচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কেহ উপাস্য নাই।’
তারপর আমরা শয়তানের প্রতারণা থেকে আশ্রয় চাই এবং বলি, ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম।’
অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহর পবিত্র নাম দিয়ে তাঁর দয়া–করুণার গুণ দিয়ে নামাজ এগিয়ে নিয়ে যাই। বলি, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।’ অর্থ: ‘পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।’ এরপর আমরা সুরা ফাতিহা দিয়ে নামাজ শুরু করি।
সুরা ফাতিহায় আমরা যখন বলি, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন (সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের মালিক আল্লাহর জন্যই)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হামিদা নি, আবদি (আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল)।’ অতঃপর আমরা যখন বলি—‘আর রাহমানির রাহিম (তিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু)’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আছনা আলাইয়া আবদি (আমার বান্দা আমার বিশেষ প্রশংসা করল)।’
এরপর যখন আমরা বলি, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দিন (তিনি বিচারদিনের মালিক)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মাজ্জাদানি আবদি (আমার বান্দা আমাকে সম্মানিত করল)।’ এরপর আমরা যখন বলি, ‘ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তায়িন (শুধু আপনারই ইবাদত করি আর শুধু আপনার কাছেই সাহায্য চাই)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হাজা বাইনি ওয়া বাইনা আবদি (এই ফয়সালাই হলো আমার ও আমার বান্দার মধ্যে—বান্দা আমার ইবাদত ও আনুগত্য করবে, আমি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করব)।’
আমরা যখন বলি, ‘ইহদিনাছ ছিরাতল মুস্তাকিম, ছিরাতল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম, গয়রিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ্দল্লিন! (আমাদের সঠিক পথ দেখান, তাদের পথ যাদের আপনি নিয়ামত দিয়েছেন; তাদের পথ নয় যারা পথভ্রষ্ট; আর না যারা অভিশপ্ত)।’ তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লিআবদি মা ছাআল (আমার বান্দা যা চায়, তার জন্য তা-ই)।’ (সহিহ মুসলিম, ৩৯৫)
এরপর আমরা অন্য একটি সুরা মেলাই। আমরা রুকুতে আল্লাহর প্রশংসা করি এবং ক্ষমা চাই। বলি: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম। অর্থ: ‘আমার মহান রবের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি।’
রুকু থেকে উঠে বলি, ‘সামি আল্লাহ হুলিমান হামিদা।’
অর্থ: আল্লাহ সেই ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তঁার প্রশংসা করে।
তারপরই আমরা আবার আল্লাহর প্রশংসা করে বলি, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’,
অর্থ: হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা কেবল তোমারই।
তারপর আমরা সিজদায় গিয়ে বলি: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা,
অর্থ: ‘আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। এভাবে নামাজ শেষে, মধ্য (দুই রাকাত, চার রাকাত ভিত্তিতে) বৈঠক আর শেষ বৈঠকে তাশাহুদে, আল্লাহর প্রশংসা করি।’
‘সকল তাজিম ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভালো কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক। আমাদের ওপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপরে শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল।’
‘হে আল্লাহ! আপনি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের ওপর রহমত বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত সম্মানিত।’
‘হে আল্লাহ! আমি আমার ওপর অত্যধিক জুলুম করেছি, গুনাহ করেছি এবং তুমি ব্যতীত পাপ ক্ষমা করার কেউ নেই। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। ক্ষমা একমাত্র তোমার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আমার প্রতি রহম কর। নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল দয়ালু।’
দুই কাঁধে সালাম দিয়ে আমরা নামাজ শেষ করি।
● ফেরদৌস ফয়সাল প্রথম আলোর হজ প্রতিবেদক
afef 78@gmail.com