রামচন্দ্র হিন্দু দেবতা ও বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। ত্রেতাযুগের শেষে পৃথিবীর উপদ্রবস্বরূপ দানবদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে তিনি নবরূপ গ্রহণ করেন। পিতা অযোধ্যার রাজা দশরথ, মা রানি কৌশল্যা এবং স্ত্রী সীতা। তিনি রামায়ণের প্রধান চরিত্র। রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকি 'রাম' চরিত্রটিকে এমনভাবে নির্মাণ করেছেন যে এর প্রভাব যুগ যুগ ধরে ভারতীয় সমাজে অটুট রয়েছে। পিতৃভক্তি, প্রজাবাৎসল্য, পরোপকার, মানবপ্রেম, লোভহীনতা, সত্যপালন ইত্যাদি রামচরিত্রের আকর্ষণীয় দিক।
রামচরিত্রে পরোপকারের বিষয়টি তাঁর বাল্যকাল থেকেই লক্ষ করা তপোবনে একসময় মুনি-ঋষিরা দানবদের অত্যাচারে যজ্ঞ করতে পারছিলেন না। তখন বিশ্বামিত্রের আহ্বানে অনুজ লক্ষ্মণসহ রাম সেখানে যান এবং দানবদের হত্যা করে ঋষিদের যজ্ঞক্রিয়া নির্বিঘ্ন করেন। পুত্র হিসেবে পিতার প্রতি এবং রাজা হিসেবে প্রজাদের প্রতি কর্তব্য কী হওয়া উচিত, তার দৃষ্টান্ত রামচরিত্রে প্রতিফলিত হয়েছে। রামের যেদিন যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার কথা, সেদিন পিতৃসত্য পালন এবং পিতার সম্মান রক্ষা করার জন্য তিনি স্বেচ্ছায় রাজত্ব ত্যাগ করে চৌদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যান।
রাম বিষ্ণুর অবতার, কিন্তু মনুষ্যরূপে জন্ম নিয়েও মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি মানবীয় আচরণই করেছেন। রাবণের লক্ষ্মীপুরীতে অবস্থানহেতু সীতার চরিত্র সম্পর্কে নিজের কোনো সংশয় না থাকলেও প্রজাদের সন্দেহের কারণে রাম সীতাকে বিসর্জন দেন। নিষ্পাপ চরিত্র সীতাকে বিসর্জন দিয়ে অনুতাপের আগুনে দক্ষ হলেও নিজের সুখের চেয়ে রাজ্যের মঙ্গল ও প্রজাদের সুখের বিষয়টিই তাঁর কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়।
যে বিমাতার ষড়যন্ত্রে অভিষেকের দিন রামকে বনবাসে যেতে হয়েছিল, সেই কৈকেয়ীকেও তিনি নিজের মায়ের মতোই শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর পুত্র ভরতকে তিনি সহোদরের মতোই দেখতেন। অবতার হয়েও রাম এভাবে একজন সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করেন এবং সমাজে আইনশৃঙ্খলা, সত্য, মানবতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন। তাই হিন্দুরা তাঁকে শুধু দেবতা হিসেবেই নয়, একজন আদর্শ পুত্র, আদর্শ রাজা, আদর্শ পতি এবং ক্ষমা, সততা ও মহত্ত্বের প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে তারা তাকে নিত্য স্মরণ করে থাকে।
সূত্র: ‘রামচন্দ্র’, যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪