সত্যতা ইমান ও ইসলাম
সত্যতা ও সততা ইসলামের মূল চালিকা শক্তি। মুমিন বা মুসলিম হলো সত্যের অনুসারী। জীবনের সব ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায় সত্যের অনুসরণ করাই হলো ইমান ও ইসলাম। আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘তুমি বলো: সত্য এসেছে, মিথ্যা অপসৃত হয়েছে; নিশ্চয় মিথ্যা দূরীভূত হবেই’ (১৭: ৮১)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরও বলেন, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে সংমিশ্রণ করো না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না’ (২: ৪২)।
সংবাদ যাচাই জরুরি
সঠিক তথ্য বা সংবাদ জ্ঞানের উৎস। তাই কোনো বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন। কারণ, ভুল তথ্যের ওপর নেওয়া সিদ্ধান্তও ভুল হবে এবং এর পরিণতি দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ হবে। এ বিষয়ে মুমিনদের সতর্ক করে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমাদের কাছে কোনো ফাসিক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তখন তোমরা তা যাচাই-বাছাই করো (তথ্যানুসন্ধান ও সঠিক সূত্র সন্ধান করো), না হলে তোমরা (এ অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে) অজ্ঞতাবশত কারও প্রতি আক্রমণ করে বসবে (যা যথাযথ নয়), ফলে তোমরা পরে তোমাদের স্বীয় কর্মের জন্য লজ্জিত হতে হবে’ (৪৯: ৬)।
রটনাকারী মিথ্যাবাদী
সত্য-সুন্দর হলো ইসলাম, মিথ্যা হলো কুফর এবং জাহেলিয়াত বা মূর্খতা হলো অন্ধকার। মিথ্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদিসে আছে, ‘মিথ্যা সব পাপের জননী’ (বুখারি)। স্বরচিত মিথ্যাকে ‘ইফতিরা’ বলা হয়। তথ্য যাচাই-বাছাই না করে অসত্য তথ্য বা ভুল সংবাদ প্রচার করাও মিথ্যার শামিল এবং প্রচারকারী ব্যক্তি মিথ্যাবাদী হিসেবে পরিগণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মানুষ মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে সে যা শুনে (সত্যাসত্য যাচাই না করে) তাই বলতে বা প্রচার করতে থাকে’ (বুখারি)। কোনো মিথ্যাবাদী কখনো প্রকৃত মুমিন হতে পারে না।
বিবেকশূন্য পরিস্থিতি
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শপথ সেই মহান সত্তার! যার হাতে আমার প্রাণ। দুনিয়া ততক্ষণ পর্যন্ত ধ্বংস হবে না (তার পূর্বে) মানুষের প্রতি এমন একসময় আসবে; হত্যাকারী জানবে না সে কেন হত্যা করছে আর নিহত ব্যক্তি জানবে না তাকে কেন হত্যা করা হয়েছে। বলা হলো: সেটা কীভাবে হবে? বললেন: হারাজ (গুজব, হুজুগ, অলীকতা, বিবেকহীনতা, মূর্খতা, নির্বুদ্ধিতা, অন্যায় হত্যা, বিচারহীনতা ও সত্য মিথ্যার মিশ্রণ ইত্যাদি) এর কারণে’ (মুসলিম: ৩৯০৮)। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের আগে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বেশি হবে, সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে, ফিতনা প্রকাশ হবে, হত্যাকাণ্ড-খুনখারাবি বেড়ে যাবে, সম্পদের আধিক্য হবে’ (বুখারি: ১০৩৬)। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! তখন কি মানুষের বুদ্ধি–বিবেক থাকবে না?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না। সে সময় মানুষ বিবেকশূন্য হয়ে যাবে এবং মনে করবে সে-ই সঠিক, আসলে তা নয়’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩২: ৪০৯)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কিয়ামতের আলামত হলো ‘হারাজ’! বলা হলো ‘হারাজ’ কী? তিনি বললেন, ‘মিথ্যা ও হত্যা। এই হত্যা হবে অজ্ঞতাপ্রসূত, স্বার্থপরতায় এবং খামখেয়ালিপনায়’ (ফাতহুলবারি-১৩: ৩৪)।
বিনা বিচারে শাস্তি ও হত্যা নিষিদ্ধ
আল্লাহ তাআলা কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা ন্যায়বিচার ব্যতীত কোনো মানুষ হত্যা করবে না, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন’ (৬: ১৫১)। তিনি আরও বলেন, ‘কোনো মুমিন কোনো মুমিনকে খুন করতে পারে না’ (৪: ৯২)। ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত কোনো বিশ্বাসী লোককে খুন করল, তার পরিণতি জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। তার ওপর আল্লাহর গজব ও লানত আর আল্লাহ তার জন্য মহা শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন’ (৪: ৯৩)। ‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল, আর যে কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে প্রাণে রক্ষা করল’ (৫: ৩২)।
দুনিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আমাদের জ্ঞানের অনুসরণ করতে হবে। বাছবিচার করে সত্যকে গ্রহণ করতে হবে। বিনা প্রমাণে কাউকে অভিযুক্ত করা কবিরা গুনাহ। আইন–আদালতের বাইরে কাউকে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান করা অপরাধ।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail.com