বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা ও সতর্কবার্তা। তাই যেকোনো সংকটে আমাদের মহান প্রভুর শরণাপন্ন হতে হবে। দোয়া-দরুদ ও নেক আমল করলে যেমন সওয়াব বা পুণ্য লাভ হয়, তেমনি বিপদ-আপদ, আজাব-গজব থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্যের সাথে “সালাত”–এর মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। যারা মুসিবতে বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর এবং আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩ ও ১৫৬)। সালাত অর্থ শুদ্ধি, পরিশুদ্ধি, নামাজ, দোয়া-দরুদ, তাসবিহ, রহমত ও ইস্তিগফার করা। (লিসানুল আরব, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩৯৭-৪০০)।
কোরআন মাজিদে ইস্তিগফারের বহু নির্দেশনা রয়েছে। যেমন ‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল।’ (সুরা ৭১ নুহ, আয়াত ১০)। ‘[হে রাসুল (সা.)!] আপনি বলুন, হে আমার (আল্লাহর) বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত ৫৩)। ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করো, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। ফলে তিনি আল্লাহ তোমাদের প্রতি সুষম বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। আর তোমাদের সম্পদে প্রাচুর্য ও সন্তানে বরকত দেবেন এবং তোমাদের জন্য বাগবাগিচা পানির ফোয়ারায় শোভিত করবেন।’ (সুরা: ৭১ নুহ, আয়াত: ১০-১২)।
‘তাওবাহ’ শব্দটি আরবি, অর্থ হলো ফিরে আসা। গুনাহ বা পাপকাজ থেকে ফিরে আসা হলো তওবা। ‘ইস্তিগফার’ বা ক্ষমা প্রার্থনা তওবার প্রথম পর্যায় এবং একটি অন্যটির পরিপূরক। ‘তাওবাহ ইস্তিগফার’ জোড়া শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়। আদি পিতা হজরত আদম (আ.)
ও আদি মাতা হজরত হাওয়া (আ.) যে ইস্তিগফার দ্বারা তওবা করেছিলেন তা হলো, ‘হে আমাদের রব! আমরা জুলুম করেছি আমাদের নফছের প্রতি, আপনি যদি ক্ষমা ও দয়া না করেন, আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা: ৭ আরাফ, আয়াত: ২৩)।
তওবা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা: ২ বাকারা, আয়াত: ২২২)। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘গুনাহ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো।’ (বুখারি)। ‘সকল আদম সন্তান পাপী, আর পাপীদের মধ্যে উত্তম হলো তওবাকারীগণ।’ (মুসলিম ও তিরমিজি)।
ইস্তিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা স্বতন্ত্র একটি ইবাদত, যা আল্লাহ তাআলার খুবই পছন্দনীয়। তাই সব নবী–রাসুল মাসুম বা নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও বেশি বেশি ইস্তিগফার করতেন। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবীদের ইমাম ও রাসুলগণের সরদার হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকেও ইস্তিগফার করার নির্দেশ দিলেন। (আল–কোরআন, সুরা: ১১০ নাছর, আয়াত: ৩)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি দৈনিক সত্তরবার আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করি।’ (বুখারি, হাদিস ৬৩০৭)। ‘যে ব্যক্তি সর্বদা ইস্তিগফার করতে থাকে, আল্লাহ তাআলা তাকে সংকট থেকে মুক্তির পথ করে দেন। যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি ও প্রশান্তি দান করেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দান করেন।’ (আবুদাউদ: ১৫১৮)।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম জাওজিয়া (রহ.) বলেন, ইস্তিগফারের শ্রেষ্ঠ দোয়াকে ছায়্যিদুল ইস্তিগফার বলা হয়। ছায়্যিদুল ইস্তিগফার দ্বারা পাপের শাস্তি হতে নিষ্কৃতি পাওয়া যায়। (মাজমুআ ফাতাওয়া)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে প্রত্যুষে এই ইস্তিগফার পাঠ করবে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি তা সন্ধ্যায় পাঠ করবে এবং সকাল হওয়ার আগে ইন্তেকাল করবে, সে–ও জান্নাতি হবে।’ (বুখারি)
ছায়্যিদুল ইস্তিফার, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনা ইলাহ বা মাবুদ নাই; আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনারই বান্দা বা গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো; আমি আপনার কাছে পানাহ ও আশ্রয় চাই আমার অনাসৃষ্টির অকল্যাণ, অপকার ও ক্ষতি হতে, আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সকল নেয়ামতরাশি এবং আরও স্বীকার করছি আমি আপনার সমীপে আমার সকল অপরাধ; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন, যেহেতু আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’ (বুখারি শরিফ)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক
smusmangonee@gmail,com