পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে আজ। ওই বৈঠক থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচন যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগ

বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ভোটে থাকছে না ধরে নিয়ে পুরোদমে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজপথে ‘সতর্ক পাহারা’ ও ‘শান্তি সমাবেশ’ করলেও ভেতরে-ভেতরে প্রার্থী বাছাই ও নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। সাবেক আমলাদের নিয়ে দুটি দল প্রচারকৌশল প্রণয়ন এবং সরকারের মাঠ প্রশাসনকে ভোটে কীভাবে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করা যায়, এর কৌশল ঠিক করতে কাজ করছে।

আজ বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক বসছে গণভবনে। ওই বৈঠক থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচন যাত্রা শুরু হতে যাচ্ছে। কারণ, বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ‘জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি’ গঠনের বিষয়টি রয়েছে বলে জানা গেছে।

এটি নির্বাচনকালীন সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে থাকে। এ ছাড়া নির্বাচন প্রস্তুতিতে কিছু উপকমিটি গঠনের বিষয়ও পরিকল্পনায় রয়েছে। প্রতিবারই ভোটের আগে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে।

ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর পর বিএনপি অনেকটা ‘ঘরে’ ঢুকে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সর্বত্র নির্বাচনী আবহ আনার পরিকল্পনা নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বসবেন। গত জুনে তেজগাঁওয়ে ট্রাক টার্মিনালের পাশের এই কার্যালয় চালু করা হয়।

 ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর পর বিএনপি অনেকটা ‘ঘরে’ ঢুকে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সর্বত্র নির্বাচনী আবহ আনার পরিকল্পনা নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নির্বাচন প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। এখন পুরোপুরি নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মধ্যে দল ঢুকে যাচ্ছে।

আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ অনেক আগেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন আনুষ্ঠানিক যাত্রা হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ

কো-চেয়ারম্যান পদ আলোচনায়

বরাবরই জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনে কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত এইচ টি ইমাম। এবার এই পদে নতুন কে আসছেন—এই নিয়ে দলে আলোচনা চলছে।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার গত জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার দুই দিন পরই আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে যান। ওই কার্যালয়ে এইচ টি ইমাম যে কক্ষে বসতেন, সেখানেই তিনি বসা শুরু করেন। তখনই বলা হচ্ছিল, এইচ টি ইমামের পদে আসছেন কবির বিন আনোয়ার। বর্তমানে তিনি এই কক্ষে বসেই নির্বাচনের প্রচারকৌশল নিয়ে কাজ করছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে কোনো পদ দেওয়া হয়নি বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। অবশ্য কবির বিন আনোয়ার নিজে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় উল্লেখ করছেন।

কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে সারা দেশে ডিজিটাল প্রচার, সরকারবিরোধী অপপ্রচারের জবাব দেওয়া এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার কাজ চলছে। জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা সারা দেশে ছয় লাখ লোকের একটি দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির কাজও চলছে।

গত জুন থেকে তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে আরেকটি দল নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। সেখানে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব মো. সাদিক, সাবেক সচিব কামাল আবদুল নাসের, সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ বেশ কয়েকজন সাবেক আমলা, পুলিশের কর্মকর্তা ও কূটনীতিক বসছেন। আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনের সময় মাঠ প্রশাসনের ‘সদ্ব্যবহার’ নিশ্চিত করতে এই দল কাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, কবির বিন আনোয়ার ও আবুল কালাম আজাদের মধ্যে কেউ কো-চেয়ারম্যান হতে পারেন—এমন আলোচনা আছে। আবার এমনও মত আছে, এবার কো-চেয়ারম্যান পদ না-ও রাখা হতে পারে। আর রাখলেও দলের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা এই পদ পেতে পারেন।

জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব হন দলের সাধারণ সম্পাদক। দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা এই কমিটির সদস্য থাকেন।

ফরম বিক্রি ও জমা অনলাইনেও

নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার পরই দলের আগ্রহীদের মধ্যে ফরম বিক্রি শুরু করবে আওয়ামী লীগ। এবার ফরমের দাম ৫০ হাজার টাকা ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে। এত দিন তা ছিল ৩০ হাজার টাকা। আজ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে ফরমের মূল্য নির্ধারণ হতে পারে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা করেছেন। চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই করা হবে মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে। তবে এবার অন্তত ১০০ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য বাদ পড়তে পারেন বলে আলোচনা আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ অনেক আগেই ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন আনুষ্ঠানিক যাত্রা হবে।