সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগান এবং আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে মঙ্গলবার দুপুরে পৃথক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের প্ররোচনায় কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী স্লোগানের বিরুদ্ধে’—শিরোনামে প্রথম সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হকসহ কার্যনির্বাহী কমিটির ১০ সদস্য। এরপর সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিনসহ কমিটির অপর চার সদস্যের উপস্থিতিতে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন হয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে গত নির্বাচনে সম্পাদকসহ ১০টি পদে জয় পান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা। সভাপতিসহ অপর চারটি পদে জয়ী হন বিএনপি-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, সব ধরনের কোটা থাকবে। তবে কত শতাংশ থাকবে সেটা সরকার, নির্বাহী বিভাগ নির্ধারণ করবে। এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন (সিএমপি) হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়টি অকার্যকর আছে। উভয় পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে।’
শাহ মঞ্জুরুল হক আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন (পাঁচটি গ্রেডে কোটা বাতিলসংক্রান্ত) পুনর্বহাল হওয়া সত্ত্বেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা দাবি করছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইন করতে হবে। এটি অবাস্তব দাবি। কারণ, এটি আইন হওয়ার মতো বিষয় না। এটি করতে হলে প্রজ্ঞাপনই যথেষ্ট। বিচারাধীন বিষয়ে জাতীয় সংসদ বা নির্বাহী বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না।’
আইনজীবী সমিতির সম্পাদক বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলনকারী শাহবাগসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের রাজাকার বলে সম্বোধন করেছে এবং তারা রাজাকার হিসেবে এখন আন্দোলনটি চালিয়ে নিতে চায়। মুক্তিযোদ্ধাদের, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের এর মাধ্যমে অপমান করা হয়েছে।’
এরপর একই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) অনেক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন, মেয়েদের হেনস্তা করা হয়েছে। পুলিশ পেছনে ছিল, সরকারি দল সামনে ছিল। শুধু ঢাকাতেই কয়েকশ ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে। ছাত্ররা আন্দোলন করছে। এটি তাদের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সংবিধানে সমাবেশ করার, বাক্স্বাধীনতার কথা বলা আছে। প্রশ্ন করতে চাই দেশে কি এখন মৌলিক অধিকার নেই? মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকলে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে?’
এ সময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন আরও বলেন, ‘হামলার সময় পুলিশ ছিল কোথায়? তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। অনেকে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। সেখানেও ছাত্রলীগের লোকজন হামলা করেছে। আমরা কি সভ্য দেশে আছি? এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি। ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য নিন্দা জানাচ্ছি। সরকারকে বলব অনতিবিলম্বে বন্ধ করুন, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করুন।’