‘ঋণ করে ঋণ পরিশোধ’ করার পরিকল্পনাকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের বড় দুর্বলতা মনে করে গণসংহতি আন্দোলন। তারা বলেছে, ঋণ করে মেগা প্রকল্প চালু এবং দফায় দফায় তার খরচ বাড়িয়ে দেশকে ঋণগ্রস্ত করে ফেলেছে বর্তমান সরকার। তাই এবারের বাজেটের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে ওই ঋণের সুদ পরিশোধের খাত।
আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গণসংহতি আন্দোলন প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
রাজধানীর হাতিরপুলের গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বাজেটের ওপর লিখিত বক্তব্য পড়েন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান। এ সময় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গণসংহতি আন্দোলন বলেছে, দেশ যে একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে, তা প্রস্তাবিত বাজেটে সরকার প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে। এ সংকট আসলে এ বছর বা এক দিনে তৈরি হয়নি, বহুদিন থেকেই এ সংকট তৈরি হচ্ছে। সেই সংকট অস্বীকার করে যেভাবে অর্থনীতি চালানো হয়েছে, তার পরিণামে সংকট আরও গভীর হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অর্থনৈতিক সংকোচনের কথা বলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণপত্র খোলায় যত বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, তাতে অর্থনীতির গতি কমবে। আর সরকার যে হারে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা করেছে, তাতে বেসরকারি খাত, বিশেষ করে ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাবে না। সরকার বিদেশ থেকে ঋণ করে যেভাবে রিজার্ভ সংকট কাটানোর চেষ্টা করছে, তা নতুন ঋণের ফাঁদে ফেলে দেশকে আরও গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যাবে।
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার বিধান রাখার সমালোচনা করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অনেকেই বৈধ টাকা প্রদর্শন না করায় তাঁদের টাকা কালোটাকায় পরিণত হয়েছে। সেটাকেই সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে সরকার। এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য যদি এটাই হতো যে বৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জিত অর্থ যা প্রদর্শিত হয়নি, তা বৈধ করার সুযোগ দেওয়া, তাহলে এ ক্ষেত্রে অর্থের উৎস প্রদর্শনের শর্ত থাকত। এই শর্ত না থাকা প্রমাণ করে সরকার অবৈধ অর্থ উপার্জনকে উৎসাহিত করছে এবং তাদের বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। বরং উচ্চ ঘাটতির এ বাজেটে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত দরপতন মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে। এ ছাড়া বাজেটে রাজস্ব আদায়ে পরোক্ষ কর বৃদ্ধি, শিক্ষাক্ষেত্রকে কম গুরুত্ব দেওয়া, সরকারের ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দের সমালোচনা করেন জোনায়েদ সাকি। তিনি আরও বলেন, জনগণের স্বার্থে বাজেট প্রণয়ন করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনবান্ধব সরকার দরকার। গণসংহতি আন্দোলন সে লড়াই এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।