আবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটি আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন ঢাকাসহ সারা দেশে জেলায় জেলায় কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপি ১২ জুলাই নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পর পর দুই দিন পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরদিন ১৩ জুলাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের এক বৈঠকে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি ঠিক করে দলটি।
ঢাকায় মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় (বাহাদুর শাহ পার্ক) পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বিএনপি। এদিন দেশের সব জেলা ও মহানগরেও এ কর্মসূচি থাকবে। কর্মসূচি চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উপস্থিতি থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই দিন রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলায় অনুরূপ কর্মসূচি থাকবে। তবে এসব শোভাযাত্রার সময় ও স্থান স্থানীয় নেতারা ঠিক করবেন।
আগামী বুধবার ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রা শুরু হবে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে সকাল ১০টায়। এটি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে।
একই দিন বুধবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে মহাখালী পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়ন করবে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন। এদিন রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোভাযাত্রা কর্মসূচি সফল করার জন্য দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, আগস্টে মাসজুড়ে শোকের মাসের কর্মসূচি থাকবে। এর বাইরে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে নিজেরা কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপি বড় জমায়েত করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগও বেশি লোক জমায়েতের উদ্যোগ নেবে।
গত ডিসেম্বর থেকেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল ঢাকাসহ সারা দেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ ১২ জুলাই ঢাকায় দেড় কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি পাল্টাপাল্টি বড় সমাবেশ করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়। তবে কোনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকলেও ভবিষ্যতে একই ধারায় চলবে—এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, বিবদমান দুই রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ততই বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সংলাপের পরামর্শও এসেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিজ নিজ অবস্থানে অটল রয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমন মুখোমুখি অবস্থানে থেকে পরপর দুই দিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হতে যাচ্ছে।