২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ঢাকার গুলিস্তান ও এর আশপাশের সড়ক নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ওই দিন রাজপথে নেতা-কর্মীদের বড় ধরনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিএনপি সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর যাতে রাস্তায় বসে পড়ার সাহস না করে।
বড় জমায়েত করাসহ বিএনপিকে চাপে রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল নেওয়ার কথা বলছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা। দলের একাধিক সূত্র বলছে, পুলিশ বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না দিয়ে অন্য কোনো জায়গার প্রস্তাব দিতে পারে। বিএনপি পুলিশের প্রস্তাবে রাজি হলে তখন আওয়ামী লীগও সমাবেশ সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে।
তবে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলের মহাসমাবেশে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের জমায়েত নিশ্চিত করা। এই মহাসমাবেশকে ঘিরে ঢাকা ও এর আশপাশের উপজেলা, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আগামীকাল বুধবার বৈঠক করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
ঢাকা জেলার আওতাধীন পাঁচটি উপজেলা—সাভার, দোহার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও ধামরাই থেকে বিপুল সংখ্যায় লোক আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা। বিএনপি কোনো অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করলে জবাব দেওয়া হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড আছে। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪। দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে কমপক্ষে দুই হাজার লোক আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ লক্ষাধিক যুবক ও ছাত্রের সমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোকেও সাধ্যের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক লোক জমায়েত করতে বলা হবে।
এ ছাড়া ঢাকা জেলার আওতাধীন পাঁচটি উপজেলা—সাভার, দোহার, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও ধামরাই থেকে বিপুল সংখ্যায় লোক আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকেও লোক আসবে। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও দলীয় সংসদ সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলর, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদেরও সম্পৃক্ত করে লোক জমায়েতে ভূমিকা রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এ জন্য সারা দেশ থেকে লোক এনে তারা জড়ো করছে। অপতৎপরতা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করবে।আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় প্রথমে। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাও একই তারিখে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে মহসমাবেশ করবে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুই দলই ২৮ অক্টোবরকে একটা উত্তেজনার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এখন যে বেশি লোক জমায়েত করতে পারবে, জনগণ তাদেরই বিজয়ী মনে করবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ জমায়েত বড় করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবরে বিএনপির কর্মসূচির বিষয়টি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে আলোচনায় (গত রোববার) তুলেছিলেন। এতে কিছুটা চাপ অনুভব করছে আওয়ামী লীগ।
আগামীকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর ও জেলা কমিটির নেতাদের বৈঠক রয়েছে। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। এতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের পুরো কমিটির নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
এর বাইরে দুই মহানগরের আওতাধীন থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। আরও থাকবেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং দলীয় কাউন্সিলররা।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের মূল কমিটির সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন উপজেলা/থানা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। এসব এলাকার নির্বাচিত দলীয় জনপ্রতিনিধিদেরও বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরাও উপস্থিত থাকবেন বৈঠকে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে এত বিস্তৃতভাবে বৈঠক করা হয়নি। এবার বেশি লোক জমায়েতের লক্ষ্য থেকে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দেওয়া হবে, ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন পেতে হলে সমাবেশে বেশি সংখ্যায় লোক আনতে হবে।
গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের জেলা, মহানগরসহ আশপাশের জেলার নেতাদের মৌখিকভাবে সাধ্যমতো উপস্থিতি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। এ জন্য সারা দেশ থেকে লোক এনে তারা জড়ো করছে। অপতৎপরতা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করবে।