প্রতিবেশী দেশ ভারতকে ট্রানজিট দেওয়ায় কী ক্ষতি হচ্ছে, এমন প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের ট্রান্স-এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স-এশিয়ান রেলের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।’
আজ বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের (বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে এ কথাগুলো বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভারত সফর করে দেশের জন্য কিছুই আনতে পারেননি। জিয়াউর রহমানই প্রথম দেশের বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ট্রানজিট তো আছেই। ত্রিপুরা থেকে বাস চলে আসে ঢাকায়, ঢাকা হয়ে কলকাতা পর্যন্ত তো যাচ্ছে। সেখানে ক্ষতিটা কী হচ্ছে? বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। আমরা কিছু অর্থ উপার্জন করছি।’ তিনি বলেন, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে রেললাইন, সড়ক ও নৌপথ বন্ধ ছিল। সেগুলো চালু করে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ব থেকে বাংলাদেশ কেন বিচ্ছিন্ন থাকবে—এমন প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ভুটান থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত একটি রাস্তা যাচ্ছে। সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। বিশ্বব্যাপী রোড হচ্ছে, সেটা থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। কেন বিচ্ছিন্ন থাকব? ভারত চাইছিল এ রাস্তাটা ভুটান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। এটা হলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে কত সুবিধা হতো। সেটাও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিলেন। আমরা চারদিকে বন্ধ হয়ে থাকব। এই হলো তাদের (বিএনপির) অবস্থা।’
বিএনপি আমলের সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কী সর্বনাশ করেছে দেশের। মিয়ানমারের গ্যাসক্ষেত্রে ভারত, চীন, জাপানের বিনিয়োগ ছিল, ওই গ্যাসটা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত নিয়ে যাবে, নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা একটা ভাগ নেব। এটা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের কোনো অভাব হতো না। খালেদা জিয়া সেটা হতে দেননি। কেন দেননি? আজকে সেই গ্যাস নিয়ে গেছে চীন।’
নিজের সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনারও জবাব দেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাজারটাকে ভারতীয় পণ্যের বাজারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। ৪০টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়ে দেন। ১৯৮০ সালে গ্যাস বিক্রির চুক্তিও করে আসেন। ১৯৯২ সালে ভারত গেলেন খালেদা জিয়া। সেখানে যৌথ ইশতেহার ঘোষণার ১১ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে ভারতে অনুপ্রবেশ করার কথা স্বীকার করে নেন। তারপর পুশইন শুরু হয়েছিল। সেখানে আমাদের বহু মানুষ কষ্ট পেয়েছিল। এ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের জন্য আমরা সংসদে দাবিও করেছিলাম, কিন্তু কর্ণপাত করা হয়নি।’
আওয়ামী লীগের আমলে গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, তিন বিঘা করিডর উন্মুক্ত করাসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া, জেনারেল এরশাদ ও জিয়াউর রহমান কেউ তো এগুলোর সমাধান করতে পারেননি, করেননি। এরশাদও ভারতে গিয়েছিলেন। কী এনেছিলেন বাংলাদেশের জন্য? কিছুই না। পারলে সব দিয়ে আসেন। খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গা চুক্তির কথা ভুলেই গিয়েছিলেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই কথা বলছে, জনসভা করছে, মিছিল করছে, বক্তৃতা করছে। রেডিও, টেলিভিশন বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সরকার কারও মুখ চেপে ধরছে না। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে সংসদে একটি ভিডিও চিত্র দেখান প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পের কাজে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের প্রশংসা করেন তিনি।
আজ চলতি সংসদের তৃতীয় অধিবেশন শেষ হলো। গত ৫ জুন সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছিল। ৬ জুন ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়, পাস হয় ৩০ জুন। বাজেটের ওপর ২২৮ জন সংসদ সদস্য ৩৮ ঘণ্টা ২৫ মিনিট বক্তব্য দেন। সম্পূরক বাজেটের আলোচনাসহ মোট বাজেট আলোচনা হয় ৪০ ঘণ্টা ৪৭ মিনিট।
এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য ১১৭টি প্রশ্ন জমা পড়ে। তিনি ৬৭টি প্রশ্নের উত্তর দেন। অন্য মন্ত্রীদের উত্তর দেওয়ার জন্য ২ হাজার ৩০০টি প্রশ্ন জমা পড়ে। ১ হাজার ৫২২টি প্রশ্নের উত্তর দেন মন্ত্রীরা। জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে ৭১ বিধিতে ১০৫টি নোটিশ জমা পড়ে। একটিও আলোচনা হয়নি।