মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে—গত বৃহস্পতিবার এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের সারা দেশ থেকে তথ্য নিয়ে তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত সেই তালিকা হয়নি। আজ রোববার তালিকা পূর্ণাঙ্গ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন।
তবে আগামীকাল সোমবার উপজেলা নির্বাচনের প্রথম পর্বের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ওই দিনের মধ্যে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান, নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথম পর্বে এ ধরনের যেসব প্রার্থী আছেন, তাঁদের বিষয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে তালিকা তৈরি হয়ে গেলে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বের বিষয়ে এতটা সমস্যা হবে না। কারণ, এর মধ্যে বার্তা সবাই পেয়ে যাবেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে দেশের ১৫০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও তিন ধাপে বাকি সব উপজেলার নির্বাচন হবে। অনেক উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সন্তান, নিকটাত্মীয় ও স্বজনেরা মাঠে রয়েছেন। অনেকে প্রথম পর্বের জন্য মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তানেরা প্রার্থী হতে পারবেন না—এটা কড়াভাবে নিশ্চিত করা হবে। বিএনপি-জামায়াত ভোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাদের অনেক প্রার্থী সরে যাবেন। এ ক্ষেত্রে প্রথম পর্বে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। আবার দু-এক জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শূন্য হয়ে পড়তে পারে। তালিকা হওয়ার পর এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ হতে পারে।
‘সরে যেতেই হবে’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল জানিয়েছেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের নিকটাত্মীয়দের সরে যেতেই হবে। তিনি বলেন, যাঁরা প্রার্থী হতে চান (পরবর্তী পর্বে), তাঁদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। প্রথম পর্বে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
গতকাল ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকে এখনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি—সে বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে।
সংসদ সদস্য পরিবারের সদস্য হলেই উপজেলা নির্বাচন করা যাবে না, বিষয়টি কতটুকু যুক্তিযুক্ত—এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ঠিক নয়, আপনি সব যুক্তি উত্থাপন করতে পারেন; কিন্তু আপনার যুক্তি জনগণ কী চোখে দেখছে? দেশের ভোটাররা কী চোখে দেখছে? আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে তৃণমূল পর্যন্ত মানুষ কিন্তু খুশি হয়েছে। দলের তৃণমূলের কর্মীরা তাঁদের মত-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তার কারণ হচ্ছে, একটা দলে আমি এমপি, আমি মন্ত্রী, আবার আমার ভাই, ছেলে—এরাও পদ নিয়ে যাবে সব, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা কী করবেন? তাঁদের পদে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই? সে সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
সব পর্যায়ের সম্মেলন, কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের সম্মেলন, কমিটি গঠনপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে। সামনে প্রথম পর্বের নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে।
বিএনপিকে নিষিদ্ধ করার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। এই প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত আমাদের এখনো হয়নি। তবে জনগণের কাছে আমরা বিএনপির সন্ত্রাসী রাজনীতির ব্যাপারে ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিতে পারি। তাদের জনগণের কাছে আরও বিচ্ছিন্ন, আরও অপ্রাসঙ্গিক করার বিষয়ে প্রয়াস আমরা চালাতে পারি। কারণ, বিএনপি রাজনৈতিক দলের পরিচয় দেওয়ার মতো গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপিকে কানাডার ফেডারেল আদালত পর্যন্ত সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আসলে বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো বৈশিষ্ট্য এখন প্রকাশ করে না। তাদের কর্মকাণ্ডে তারা একটা সন্ত্রাসী দল, এটাই তাদের পরিচয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।