দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী কতজন, তা নিশ্চিত নন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) মহাসচিব মো. শাহ্জাহান। ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই দলের কতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তা–ও নিশ্চিত করতে পারেনি দলটি। বিএনএম দাবি করেছে, বিএনপির ১৭ জন সাবেক সংসদ সদস্য তাদের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। যদিও দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে দলের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহ্জাহান। দলের প্রার্থীর সংখ্যা নিয়ে তৈরি হওয়া অস্পষ্টতা দূর করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কিন্তু দলটির পক্ষ থেকে তাদের প্রার্থীদের বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেনি। বরং সংবাদ সম্মেলনে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করতে থাকেন দলের মহাসচিব। একসময় দলের প্রার্থী কারা ও কতজন, তা নিয়ে নিজেই তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।
বিএনএমের মহাসচিব শাহ্জাহান বলেন, ৪৭৮টি ফরম বিক্রি করলেও মাত্র ৮২ জনকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর এলাকায় যেতে দেরি হয়েছে অনেকের। অনেকে কাগজপত্র গোছাতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যাংকের যে সার্ভারে ট্রেজারি চালান দিতে হয়, সেটাতে তিন ঘণ্টায় ঢোকা যায়নি। কয়েকজন এ বিষয়ে রিট করবেন।
গত ৩০ নভেম্বর ছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। ইসির হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন আসনে বিএনএমের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৪৯ জন। তবে দলের কতজন প্রার্থী, এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি দলের মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ইসির কাছ থেকে তালিকা পাইনি। আমরা ইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তালিকা চাইব।’
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বিএনএমের মহাসচিব দাবি করেন, তাঁদের দলের প্রার্থীর সংখ্যা আসলে ১০২। ৮২ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি ২০ জন ‘হিডেন (লুকানো)’ প্রার্থী। এই ২০ জনের সবাই সাবেক সংসদ সদস্য বলে তিনি দাবি করেন।
এরপর বিএনএম কীভাবে সরকার গঠন করতে পারবে, সেটারও একটি হিসাব তুলে ধরেন দলের মহাসচিব শাহ্জাহান। তিনি বলেন, ‘বরাবরই বলেছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার গঠন করতে পারব। ৮২ জন প্রার্থী, এর সঙ্গে ২০ জন হিডেন। এই ১০২টি আসন পেলে কোয়ালিশন করলে আমরাই সরকার গঠন করব। সেটা না হলে প্রথমবারের মতো বিরোধী দলে যাব।’
শাহ্জাহান বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, ২০ জন সাবেক সংসদ সদস্য যোগ দেবেন। তবে ২৫ থেকে ৩০ জন পেয়েছি। এর মধ্যে ২০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমাদের দলের হয়ে সংসদে যাবেন।’
বিএনএমের মহাসচিব শাহ্জাহান দাবি করেন, ‘যে ২০ জন “হিডেন” সাবেক সংসদ সদস্য তাঁদের দলের হয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন, তাঁদের মধ্যে ১৭ জন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য। একজন জাপা ও দুজন স্বতন্ত্র ছিলেন।’
তখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নির্বাচনে আছেন পাঁচজন। এর জবাবে বিএনএমের মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এই ১৭ জনকে মনোনয়ন দিয়েছি। দাখিল না করলে আমরা কী করতে পারব?’
বিএনপি থেকে কতজন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএমে যোগ দিয়েছেন ও প্রার্থী হয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে একেকবার একেক তথ্য দেন বিএনএমের মহাসচিব। প্রথমে তিনি বলেন, দলের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ৯ জন। খানিক পরই বলেন, বিএনপি থেকে এসেছেন সাতজন। সব দল মিলিয়ে ১০ জন সাবেক সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনাদের দলীয় মনোনয়নের তালিকায় সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ছয়জন। এর জবাবে শাহ্জাহান বলেন, ‘ছয়জন না। সাতজন আছেন।’ এরপর তিনি নিজেই দলের প্রার্থী তালিকায় থাকা সংসদ সদস্যদের সংখ্যা গুনতে শুরু করেন। ছয়জন গোনার পর বলেন, ‘তালিকার শেষে আরেকজন আছে।’ তখন সাংবাদিকেরা আরেকজনের নাম জানতে চান। জবাবে বিএনএমের মহাসচিব বলেন, ‘আরেকজনের নাম আমরা পরে আপনাদের পাঠিয়ে দেব।’
দেশের রাজনীতিতে ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনএম থেকে সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, এমন আলোচনা ছিল। দলটির পক্ষ থেকেও নানা চমকের কথা বলা হয়েছিল। নানা কথা বলে দলের নেতারা আলোচনার জন্ম দিলেও শেষ পর্যন্ত সাড়া ফেলার মতো কিছু ঘটাতে পারেনি।