‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্র নিয়ে ঢাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া 

ভারতের সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্রে বাংলাদেশকে অংশ করায় এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। 

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারতের’ এই মানচিত্র বসানো হয়েছে

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ধরনের মানচিত্রে বাংলাদেশকে অংশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এসব দল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মানচিত্রটি অপসারণেরও দাবি করেছে। 

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টাতে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। দলটির নেতারা বলেছেন, ভারতের সংসদ ভবনে এ ধরনের মানচিত্রের মাধ্যমে কী বোঝানো হচ্ছে, সেটা তাঁরা জানার চেষ্টা করবেন।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ তিনজন নেতা এবং দুজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তাঁরা বলেছেন, ভারতের সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড মানচিত্রের ব্যাপারে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। ভারত এ ধরনের মানচিত্র দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছে, সেটা তাঁরা জানার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য
পাওয়া যায়নি।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৪৭–উত্তর আধুনিক রাজনৈতিক মানচিত্রে অখণ্ড ভারত বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু অখণ্ড ভারতের মানচিত্র ভারতের সংসদে প্রদর্শন—এটা অনভিপ্রেত। তিনি আশা করেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটি সংশোধন করে সঠিক মানচিত্র প্রদর্শন করবে।

বিরোধী দল বিএনপি ভারতে এমন মানচিত্র তৈরির ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। দলটি বলেছে, এটি স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের অখণ্ড মানচিত্রে বাংলাদেশকে দেখানোটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।’ তিনি মনে করেন, এটি বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক।

ভারতের সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র আঁকা হয়েছে, তাতে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার। এ নিয়ে নেপালে ইতিমধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে।

ঢাকায় বামপন্থী কয়েকটি দল গতকাল শনিবার বিবৃতি দিয়ে ভারতে এ ধরনের মানচিত্র তৈরির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বিবৃতিতে বলেছেন, ভারত সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক মানচিত্রের এই ম্যুরাল স্থাপন করেছে। সিপিবি নেতারা অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানান।

অখণ্ড ভারতের এই ম্যুরাল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে বলে মনে করেন সিপিবির নেতারা।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এক বিবৃতিতে ভারতের এ ধরনের মানচিত্র তৈরির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, ‘ভারতের শাসকদের কল্পিত মানচিত্রে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ দেখানো আপত্তিকর।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, অখণ্ড ভারত মানচিত্রে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, এটি এসব দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি দেশটির রাজনীতিকদের অনেকে মেনে নেয়নি। তাদের ভেতর অখণ্ড ভারতের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে।’ তবে ভারত আসলে এ ধরনের মানচিত্র এঁকে কী বোঝাতে চাইছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।