শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে
শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে

সংবিধানের বাইরে একচুলও যাবে না আওয়ামী লীগ

নির্দলীয় সরকার বা সংসদ বিলুপ্তি কিংবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ—এর কোনোটিই মানবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি বলছে, সংবিধানের বাইরে একচুলও নড়বে না তারা। সংবিধান মেনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকার কথা আবারও জোরালোভাবে বলেছেন দলটির নেতারা।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানী ঢাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’পূর্ব সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যে ঘুরেফিরে এসব বিষয় এসেছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত এই শোভাযাত্রা করা হয়। এতে হাজারো নেতা-কর্মী অংশ নেন।

এত দিন বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে ‘শান্তি সমাবেশ’ করে আসছিল আওয়ামী লীগ। গতকাল ছিল বিএনপির পদযাত্রা। এর বিপরীতে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আজ বুধবারও ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রার বিপরীতে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা রয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে নেতাদের বক্তব্যের পর বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা শুরু হয়, যা শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, কলাবাগান হয়ে সন্ধ্যার দিকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নির্বাচনী প্রচারের আবহ ছিল। বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের। শোভাযাত্রায় থাকা ছোট ট্রাকে সাউন্ড বক্স বসিয়ে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’, ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’—এ ধরনের স্লোগান ও নির্বাচনী গান বাজানো হয়। অনেকে একই ধরনের টি-শার্ট, ক্যাপ পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পোস্টার ও ব্যানারে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ সরকারের বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরা হয়।

গতকাল বেলা দুইটার পর থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মূল দল এবং সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। শোভাযাত্রার বহরে থাকা ভ্যান ও ছোট ছোট ট্রাক নানা স্লোগানসংবলিত ব্যানার এবং নৌকার প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়। ঘোড়ার গাড়িও সাজিয়ে আনেন অনেকে। নেতা-কর্মীদের জমায়েতের কারণে বেলা তিনটার পর মৎস্য ভবন মোড় থেকে শাহবাগ পর্যন্ত সড়ক কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

ঢাকার বাইরে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলাতেই গতকাল একই ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ।

আজ বুধবারও শোভাযাত্রার কর্মসূচি রেখেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড়ে থেকে তিব্বত, নাবিস্কো হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে গিয়ে শেষ হবে এই শোভাযাত্রা। আজও ওবায়দুল কাদেরসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এই কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন। ঢাকার বাইরে রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতেও একই ধরনের কর্মসূচি রয়েছে দলটির।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না

ঢাকায় শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী দিয়েছে? তত্ত্বাবধায়ক সরকার, শেখ হাসিনার পদত্যাগ, সরকারের পদত্যাগ দিয়েছে? তাদের কাছে দাবি করে কে? বিএনপি। কী পেয়েছে? একটা হাঁসের ডিম, ঘোড়ার ডিম।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমেরিকানরা আসছে, মনে করছে তারা তত্ত্বাবধায়ক দেবে, সংলাপ করতেই হবে—এ কথা বলবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ আমেরিকানরা চাইবে। তারা এল, চলে গেল। বিএনপিকে দিয়ে গেল একটা ঘোড়ার ডিম।’

বিএনপির উদ্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না। সংসদ বিলুপ্ত হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির কথায় প্রধানমন্ত্রী সরে যাবেন? যতই ষড়যন্ত্র করেন, বিষোদ্‌গার করেন কোনো লাভ হবে না। আমরা আমেরিকা এবং ইইউ প্রতিনিধিদলকে বলেছি, বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে শান্তি চাই, নির্বাচনে শান্তি চাই, নির্বাচনের পরে শান্তি চাই।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী। পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া), কামরুল ইসলাম ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন; বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

গায়ে পড়ে গোলমাল নয়

বিএনপির জোট নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছিল ৫৪ দল, নামতে নামতে সব মিলিয়ে ৩৬ দল। ওই দিন বলে ২৬, আবার বলে ৩৬। দফা একটা, আবার বলে ৩২টা। দফা আসলে কী। যাদের দফার ঠিক নাই, ঐক্যের ঠিক নাই।’

বিএনপিকে খালি কলসি দাবি করে দলের নেতা-কর্মীদের সংঘাতে না জড়ানোর আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমাদের শেখ হাসিনার কলসি উন্নয়নের, এটা নড়ে না। আপনারা কেন নড়বেন? কেউ নড়বেন না। কাউকে কিছু বলবেন না। কেউ অন্যায় করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে।’

দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘লাঠিসোঁটার দরকার নেই। পাল্টাপাল্টির দরকার নেই। আমাদের ওপর আক্রমণ করলে পরিস্থিতি বলে দেবে আমরা কী করব। নিজেরা নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি এটা নেত্রীর পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের সব নেতা-কর্মীকে এ অনুরোধ করছি।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, গায়ে পড়ে কারও সঙ্গে গোলমাল করবেন না। এখন ধৈর্য ধরার সময়, আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ কেন গোলমাল করবে? পরিবেশ যত শান্ত থাকবে, আওয়ামী লীগের তত সুবিধা। কাজেই পরিবেশ যাতে অশান্ত না হয়, কারও উসকানিতে সাড়া দেওয়া যাবে না।

বিএনপির পদযাত্রাকে ‘পতনযাত্রা’ বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তিনি (ফখরুল) কী বলেছেন? পদযাত্রার জয়যাত্রা, বিজয়যাত্রা। আসলে পদযাত্রার পরাজয় যাত্রা। পদযাত্রার পতনযাত্রা শুরু হয়ে গেছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব বলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টার বেশি আসন পাবে না। কয়েক দিন আগে বলেছিল ১০টা। ফখরুল সাহেবেকে ধন্যবাদ। ২০টা এর মধ্যে বেড়ে গেছে। আমি বলতে চাই, ৩০টা ২০০৮ সালে আপনার নেত্রী খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে জনগণ দেখিয়ে দিয়েছিল ৩০ সিট বিএনপির, বাকি সিট আওয়ামী লীগের।’

‘বিএনপি মার্কা তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ আওয়ামী লীগ মানে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদেরও দফা একটা। আমাদের দফা, সংবিধানমতো নির্বাচন। সংবিধানে যেটা আছে, সেটাই আমরা প্রয়োগ করব। এর বাইরে একচুলও নড়ব না।’