বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষও স্বপ্নপূরণের সুযোগ পাবেন, এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই: তারেক রহমান

শারীরিক সীমাবদ্ধতার শিকারসহ সব নাগরিককে সঙ্গে নিয়েই ‘আগামীর নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রতিটি মানুষ তাঁর সীমাবদ্ধতা জয় করে নিজের স্বপ্নপূরণের সুযোগ পাবেন। একজন রাজনীতিক হিসেবে প্রতিশ্রুতি দিতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে যেন কাউকে বৈষম্যের শিকার না হতে হয়, পিছিয়ে না রাখে, এর জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নিয়ে জীবনযুদ্ধে বিজয়ের অজস্র গল্প সৃষ্টি করা হবে।’

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডির আরডিইসি মিলনায়তনে প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি লন্ডন থেকে মতবিনিময় সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।

অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, শারীরিকপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিকরা ২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইনের সংশোধনসহ তাঁদের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন।

প্রতিবন্ধীরা একা নন, উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করে আমরা একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই। ইচ্ছা রাখি, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তাঁর পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারেন ইনশা আল্লাহ।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ, সক্ষম ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আমি ও আমার দল বিএনপি উপলব্ধি করে, আপনাদের সমস্যা ও কষ্টগুলো বাস্তব এবং গভীর। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের পেছনে রেখে আমরা কখনো এগিয়ে যেতে পারব না, এগোতেও আমরা চাই না। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব, সেটি হবে সবার জন্য বসবাসযোগ্য এবং সবার জন্য উপভোগ্য যেন হয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি হলো, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের মানোন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যার ভিত্তি হবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সামাজিক সক্ষমতা এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যার ভিত্তি হবে বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উদারতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ।’

ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা অধিদপ্তর গঠন, জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল হেলথ ক্লিনিক চালু, প্রতিবন্ধীদের সহায়ক উপকরণসমূহ তৈরির কারখানা স্থাপন, প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট, প্রান্তিক থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত খেলাধুলার সিস্টেমেটিক ডেভেলপমেন্ট এবং টুর্নামেন্টের মাধ্যমে প্যারা অলিম্পিকের সহায়তা করা হবে বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

প্রতিবন্ধীদের সাফল্য হিসেবে পটুয়াখালী একজন বাক্‌প্রতিবন্ধী, মৌলভীবাজারে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং কুমিল্লার একজন চলার শক্তিহীন প্রতিবন্ধীর কাজ করে অর্থ উপার্জনের চারটি গল্প তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘তাঁদের গল্প আমাদের শিখিয়েছে, বাধা শুধু একটি শব্দ, যা চেষ্টার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব, তাঁদের লড়াইকে সম্মান জানানো, তাঁদের পাশে দাঁড়ানো।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা আমাদের মনে করিয়ে দেন যে সব অক্ষমতাকে জয় করে সমাজে প্রত্যেক মানুষ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চান এবং দৃঢ়তার সঙ্গে সসম্মানে বাঁচতে চান…আপনাদের সেই সাহস, সংকল্প ও শক্তি আমাদের জন্য, অনেক মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস। এটি আমাদের উদ্বুদ্ধ করে সাম্য, মানবিক, সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক একটা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি প্রতিবন্ধীদের বক্তব্য শুনে বলেন, ‘আজ এখানে এসে আমার কাছে নতুন জগৎ উন্মোচিত হয়েছে। এখানে না এলে এর সঙ্গে পরিচিত হতে পারতাম না। আমরা আপনাদের সহযাত্রী। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আপনাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, আমরা বিএনপি পরিবার-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য মোস্তফা আজিজ ও ফারজানা শারমিন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদের (পিএনএসপি) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব ও ইফতেখার মাহবুব।