জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক

প্রকৃত নিহতের তালিকা প্রকাশের দাবি জাতীয় পার্টির

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)।

দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু) আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের ‘বীর মুক্তিসেনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে। একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রকৃত নিহতের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের চলমান অহিংস আন্দোলনের প্রতি জাতীয় পার্টির সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর বনানীতে জাপা কার্যালয়ে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক তাঁদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। যৌথ সভায় ৪২ জন নেতা চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুজিবুল হক বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন হলেও এটি আর ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ আন্দোলন ছিল না। একপর্যায়ে এটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।

মুজিবুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিনের শোষণ, বঞ্চনা, গণতন্ত্রহীনতায় মানুষের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনের ওপর অত্যাচার শুরুর পর থেকে তাদের রক্ষা করার জন্য জনগণও তাদের সঙ্গে নেমে পড়ে। ছাত্রদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, অসংখ্য ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। আহত করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন আমরা অতীতে দেখিনি।’

এ ধরনের বর্বর ও নিপীড়নমূলক হত্যাকাণ্ড জাতি কখনো প্রত্যক্ষ করেনি, এমন মন্তব্য করে জাপার মহাসচিব বলেন, ছাত্র আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের মামলার এজাহারে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ না দিয়ে মিথ্যা এজাহার দাখিল করা হচ্ছে। জাপার যৌথ সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা এর নিন্দা জানিয়েছেন।

মুজিবুল হক আরও বলেন, তাঁদের দলের সভায় ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত সব সরকারি কর্মকর্তা ও উসকানিদাতাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হয়রানি-নির্যাতন না করার আহ্বান জানানো হয়। ছাত্রদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তার ছাত্রদের অনতিবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়।

জাপার মহাসচিব বলেন, সভা মনে করে, কেপিআইভুক্ত বা স্পর্শকাতর স্থাপনাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব সরকারের। সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এই দায় সরকার এড়াতে পারে না।

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, সহিংসতার নামে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের দায় স্বীকার করে চলে যাওয়া উচিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো মন্ত্রী বা এমপির বাড়িতে তো হামলা হয়নি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি স্থাপনাগুলো রক্ষায় তাদের কোনো উদ্যোগ ছিল না। আন্দোলনরতদের গ্রেপ্তারের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার–বাণিজ্য চালাচ্ছে।’

যৌথ সভায় জাপার কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।