গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের অব্যাহত নেতিবাচক আচরণ ও প্রতিক্রিয়ায় ভীষণ উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কী করে একটি বিশেষ দল ও ব্যক্তির জন্য স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে এভাবে দাঁড়াতে পারেন, তা ভেবে বিস্মিত বিএনপি। ভারতের এই ‘একচোখা’ অবস্থানে বিস্মিত-উদ্বিগ্ন দলটির নেতারা।
গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সভায় সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর্যালোচনায় এ কথাগুলো উঠে আসে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আচরণ ও প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট, তারা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন মেনে নিতে পারেনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর ধারাবাহিক ঘটনাগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, হঠাৎ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংঘটিত কর্মসূচি ঘোষণা করে মাঠে নামা, হিন্দুধর্মাবলম্বী একটি জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে একজন আইনজীবীকে হত্যা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরজি জানানো এবং সর্বশেষ আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। এর সঙ্গে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং সে দেশে আশ্রয় নেওয়া ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাদের ইন্ধন ও কর্মীদের অংশগ্রহণ রয়েছে।
এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৃথকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা এ ঘটনাগুলোকে পুরোপুরি উসকানি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ বলে মনে করেন। তবে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনার পর ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুঃখ প্রকাশ এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণকে বিএনপির নেতৃত্ব ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব বিষয়ে বিএনপি দু-এক দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবে। সেখানে ভারতের সাম্প্রতিক ও আগের কর্মকাণ্ডের একটি তথ্যচিত্র দেখানোর কথা রয়েছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি ঢাকায় একটি কনসার্টের আয়োজন করবে। কনসার্টে বিদেশি কোনো শিল্পী থাকবে না। দেশের সংগীতশিল্পীদের নিয়ে এ কনসার্ট হবে। জাঁকজমকভাবে এটি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে ২১ ডিসেম্বর ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ শিরোনামে একটি দাতব্য কনসার্ট হবে। সেখানে গাইবেন জনপ্রিয় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। স্থায়ী কমিটির সভায় এ কনসার্টের বিষয়েও আলোচনা হয়।
এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়। সভায় নেতারা বলেন, এ রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক ছিল। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলাটি করা হয়।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের শ্বেতপত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য দলের কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি যুক্তরাজ্য থেকে সভায় অনলাইনে যুক্ত হন। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (লন্ডন থেকে অনলাইনে), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমদ (অনলাইন), সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ, হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।