সুশাসন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকগুলোতে পেছনের সারিতে থাকা বাংলাদেশ কোনো বছর সামান্য এগোয়, কোনো বছর পেছায়। বড় উন্নতি নেই।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) মাপকাঠিতে বাংলাদেশ একটি ‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দেশ।
ইআইউয়ের শ্রেণিবিভাগ অনুযায়ী, ‘হাইব্রিড’ শাসনব্যবস্থার দেশে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ ‘হাইব্রিড’ ধরনের শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।
এ ধরনের দেশে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপ দেওয়া হয়।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ গৃহীত আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস। ২০০৮ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ দিবসে এসে দেখা যাচ্ছে, গণতন্ত্র সংশ্লিষ্ট সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান পেছনে। বছর বছর কোনো সূচকে বাংলাদেশ সামান্য এগোয়, কোনো সূচকে পেছায়। তবে বড় উন্নতি দেখা যায় না।
২০০২ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে ঘোষণা করে। গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।’
দেখা যাক, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ফ্রন্টিয়ার্সের মুক্ত গণমাধ্যম সূচক–২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২তম দাঁড়িয়েছে।
সুশাসন, দুর্নীতি দমন, ইন্টারনেটে বাক্স্বাধীনতা—কোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আকর্ষণীয় অবস্থানে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশি সংস্থার সূচক দেখার দরকার নেই, দেশে বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন, বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের দমননীতি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গণহারে মামলা, সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি—এসবের মাধ্যমে দিব্যলোকের মতো স্পষ্ট যে দেশ গণতন্ত্রের দিক দিয়ে পিছিয়ে গেছে।
অসামরিক শাসন আমলে এতটা পেছানোর ঘটনা ৫০ বছরের ইতিহাসে কখনোই ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘১৯৯১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সময়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছিলাম। ২০১৪ সালের পর থেকে ক্রমাগতভাবে পেছাচ্ছি।’