ক্ষমতাসীনদের লুটপাটে দেশের ব্যাংকগুলোতে ‘লাল বাতি’ জ্বলার অবস্থা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আজকে ব্যাংকগুলো লুট করে নিয়েছে তার মালিকেরা। যাকে-তাকে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো ফোকলা করে ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোতে রং দিচ্ছে। কোনোটা সবুজ, কোনোটা হলুদ, কোনোটা লাল।
নজরুল ইসলাম খান মন্তব্য করেন ‘লাল’ মানে লালবাতি জ্বালানোর অবস্থা হয়ে গেছে ব্যাংকগুলোর। অথচ সেই ব্যাংকমালিকদের বাঁচানোর জন্য সরকার লাভজনক ব্যাংকের সঙ্গে খারাপগুলোকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আজ সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে নজরুল ইসলাম খান এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়। নজরুল ইসলাম খান এতে প্রধান অতিথি ছিলেন।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিনিয়ত টাকার মূল্য কমে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক দিন আগে একযোগে এক ডলারের বিপরীতে টাকার দাম সাত টাকা কমানো হয়েছে। ইতিহাসে কখনো এত বড় মূল্যহ্রাস ঘটেনি বাংলাদেশি টাকার। প্রকৃতপক্ষে এখন এক শ পঁচিশ টাকা লাগছে এক ডলার কিনতে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দেশের ঋণের পরিমাণ হয়ে গেছে এক শ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তারপরও ঋণ। আমার-আপনার এই ঋণ…আমি-আপনি ভোগ করতে পারি নাই। এটা মাত্র হাতে গোনা কিছু লোক ভোগ করেছে, ভোগ করে তারা কোটিপতি হয়েছে, বিদেশে কোটিপতি হয়েছে।’
সরকারের সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের যখন এত সব সমস্যা, যখন উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেওয়া হয়েছে, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে যিনি বসে আছেন, তাঁকে আমরা বলতে শুনলাম, এখন আমাদের একমাত্র কাজ হলো একটা খারাপ শব্দ ব্যবহার করে তারেককে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব, ভাবুন।’
কেন তারেক রহমানের ওপর সরকারের রাগ, সে প্রশ্ন তোলেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘রাগের কারণটা এই যে তারেক রহমান গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জোরদার করেছেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডানপন্থী, বামপন্থী, সমাজতন্ত্রী, ইসলামি দল—সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে এক আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, যে আন্দোলনের ফলে ১০ শতাংশ লোকও ভোট দিতে যাননি। এই হলো রাগ। যার জন্য এই ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক লুট, দুর্নীতি, অনাচার, মানবাধিকার হরণের কারণে দেশের সাবেক সেনাপ্রধান, সাবেক পুলিশপ্রধান—তাঁরা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ার পরও সেগুলোর কোনোটাই প্রধান কাজ নয়। একমাত্র কাজ তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেওয়া।’
আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকেই পাকিস্তানিরা বন্দী করে রেখেছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থান ঠেকানো যায়নি। মাওলানা ভাসানীসহ নেতারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানকে পদত্যাগ করতে হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে হয়েছে, সত্তরে নির্বাচন দিতে হয়েছে, সেই নির্বাচনে বিজয় হয়েছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ও এসেছে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, তার মানে দাঁড়াল, বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করে রেখে, শাস্তি দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঠেকানো যায় না। কারণ লড়াই–সংগ্রাম করে জনগণের বিজয় হয় এবং যাদের ওপর অত্যাচার করা হয়, তারাই আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ইতিহাস বারবার এটা প্রমাণ করেছে, আগামী দিনেও প্রমাণ করবে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা জেলার নেতা তজিমউদ্দিন প্রমুখ।