বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের সংস্থা ও অন্যান্য অংশীদারদের আহবান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাধারণ পরিষদের সভাপতি, মিয়ানমার বিষয়ে মহাসচিবের বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং জাতিসংঘের ছয়টি উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পৃথক চার বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিসকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০১৭ সালে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তখন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মানুষ তাদের মমতা দিয়ে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ক্রমেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থান করছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো মানব পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গিনিয়োগসহ নানা অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন অতিষ্ঠপ্রায়।
অপরদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে বৈঠকে হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রায় ৭৫০ সদস্য বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগকেই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকিদেরও পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। শুধু তা–ই নয়, মিয়ানমারে বিবদমান গোষ্ঠীর গোলা বাংলাদেশ অংশে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসবের পুনাবৃত্তি রোধ একান্ত প্রয়োজন।
মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপের সঙ্গে বৈঠকে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, মিয়ানমারে চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতি কোনো নতুন ঘটনা নয়। এটিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে ব্যবহারের অজুহাত তৈরির সুযোগ দেওয়া অনুচিত।
এর আগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘ক্রাইসিস, কনফ্লিক্টস অ্যান্ড ইন্টার এজেন্সি কোলাবরেশন: নেক্সাস অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন হাছান মাহমুদ। জাতিসংঘের ছয় সংস্থা ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ, ইউএনওপিএস ও ইউএন উইমেনের প্রধান এবং ইউনিসেফ ও ডব্লিউএফপির উপপ্রধান এতে অংশ নেন।
বিশ্বে সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের সুবিধাগুলো তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি রাখাইন ও কক্সবাজারের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। উদ্বাস্তু সংকট নিরসন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উন্নতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের সব সংস্থা, তহবিল এবং কর্মসূচিকে সুসংহতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ এ মুহিত, মন্ত্রণালয় ও মিশনের অন্যান্য সদস্যরা বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।