‘ভারতের সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চুক্তি ও সমঝোতায় নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা। ডিআরইউ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা
‘ভারতের সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চুক্তি ও সমঝোতায় নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নতা ও করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তারা। ডিআরইউ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা

আলোচনা সভায় বক্তারা

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে জাতীয় স্বার্থের খেয়াল রাখতে হবে

একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেকটি রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থের খেয়াল রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ সেই স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে কি না, সেটা ভেবে দেখতে হবে।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ভারতের সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী চুক্তি ও সমঝোতায় নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নতা ও করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে ‘আগ্রাসনবিরোধী নাগরিক সমাজ’।

আলোচনা সভায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী বলেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ খেয়াল রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলাদেশ কি সেই স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে? তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করেছে সেটা ঠিক, কিন্তু একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জরুরি ছিল ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য।

দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, চাকরিতে কোটার বিষয়টি একটা মীমাংসিত ইস্যু। সেটা সরকার আবার সামনে কেন নিয়ে এল? এর পেছনে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে। আজিজ-বেনজীরদের দুর্নীতির খবর ঢাকতেই এসব নাটক। এসব করে সরকার জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এমন চুক্তি মেনে নেওয়া যায় না। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে গত মাসে টানা তৃতীয় মেয়াদে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি তো টেনেটুনে পাস করে সরকার গঠন করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তো নির্বাচনব্যবস্থাই ধ্বংস করে দিয়েছেন।’

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ভারত রাষ্ট্রের চরিত্রটা যদি আমরা না বুঝি, তাহলে ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই সফল হবে না। তাই ভারতের চরিত্রটা বুঝতে হবে।’ তিনি বলেন, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে ভারতের লোক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই।

‘কালচারাল ভারতের’ সীমানা অনেক বড় মন্তব্য করে মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘ভারতের মনোভাব এমন যে ছোট রাষ্ট্র হিসেবে কারও বেঁচে থাকার অধিকার নেই। এমন মনোভাব পোষণ করা একটি দেশের আগ্রাসন থেকে আমরা কীভাবে রক্ষা পাব, সেটা চিন্তার বিষয়।’

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের করিডর সমঝোতা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। এই সমঝোতার মাধ্যমে তৃতীয় রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে কখনো মর্যাদা দেয় না। ভারত তাদের স্বাধীনতা দিবসে নেপাল-ভুটানের মতো দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের অতিথি করলেও বাংলাদেশের কাউকে অতিথি করে না। বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করার জন্য যে ফি দেওয়ার কথা, সেটাও পায় ভারত আর কিছুটা নেপাল পায়।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, আইনজীবী ও কলামিস্ট সাইমুম রেজা, লেখক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ। সভার সঞ্চালনা করেন আগ্রাসনবিরোধী নাগরিক সমাজের সদস্য মু. নিজাম উদ্দিন।