১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চ তৈরি করে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের আমলাতন্ত্র নষ্ট করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল, তারাই সবার আগে নষ্ট হয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর লেখা ‘ফেনীতে ৩২১ দিন: জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক এই বইয়ের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইংল্যান্ডের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও আমলারা প্রভাব বিস্তার করেন, এটা সত্য কথা। তারপরও আমরা তো ১৯৭১ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করার জন্য যুদ্ধ করেছি। গণতন্ত্র ফেরাতে বহুভাবে চেষ্টা করেছি। ৫৩ বছর চলে গেল। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো না।’
রাজনীতিতে এখন কঠিন সময় চলছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এত কঠিন সময় অতীতে কখনো আসেনি। নষ্ট সময় এসে গেছে। দেশের রাজনীতির পাশাপাশি ভূরাজনীতি একটা বড় বিষয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি প্রতিকূলতা, বৈরী অবস্থা ও যন্ত্রণার মধ্যেও মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
বুদ্ধিজীবীদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, দয়া-দাক্ষিণ্য পেলে বুদ্ধিজীবীরা বিচলিত হয়ে যান। তাঁরা একটা প্রকল্প, একটা ভালো চাকরি, একটা পত্রিকার মালিকানা, ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়ে যান। এটা প্রায়ই হচ্ছে। দেশ রক্ষায় ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বুদ্ধিজীবীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
১৯৯৬ সালে আমলাতন্ত্রের বড় সর্বনাশ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহও। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তখন আমলাদের একটি অংশ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। এরপর আমলাতন্ত্র দলতন্ত্র হয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে আমলাদের পদোন্নতি হওয়ার আগে ‘ডিএনএ পরীক্ষা’ করা হয় বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, পদোন্নতি দেওয়ার আগে এখন স্বজনেরা কে কোন দলের, কোন মতের তা দেখা হচ্ছে। আমলাদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করলে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
২০১৮ সালের পর থেকে দেশে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এই সংস্কৃতি চালু হওয়া সম্ভব হয়েছে সোলায়মান চৌধুরীর মতো সৎ, সাহসী আমলারা না থাকার কারণে। এখন দেশের বুদ্ধিজীবীরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পর্যন্ত ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন না। সঠিক কথা বলতে পারছেন না এই ভয়ের কারণে। সবার ভয়, কিছু বললেই বোধ হয় আমাকে জেলে যেতে হবে।’
বইয়ের লেখক ও এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারলে অনেক কঠিন কাজ করা সম্ভব, এটা প্রমাণিত হয়েছে ফেনীতে। ফেনীকে কীভাবে এক বছরের কম সময়ে সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলেন, সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি।
এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ফেনীর জেলা প্রশাসক ছিলেন। তখন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য পরিচিত আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আলোচিত হন তিনি। সে সময় জয়নাল হাজারী ভারতে চলে যান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, কবি আব্দুল হাই শিকদার ও বইয়ের প্রকাশক এবং সূচীপত্রের প্রধান নির্বাহী সাঈদ বারী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান।