আ.লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়: মির্জা ফখরুল

রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ছবি: প্রথম আলো

বর্তমান সরকারের অধীনে যে কখনোই কোনো নির্বাচন হতে পারে না, তা সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে প্রমাণ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ মন্তব্য করেন। সমাবেশ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন তিনি।

বগুড়ার উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হিরো আলমের নাম উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ প্রমাণ করেছে সে, এই আওয়ামী লীগ হিরো আলমের কাছেও কতটা অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তাঁর সঙ্গে জিততে হয়। আবদুস সাত্তার (উকিল) পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র নির্বাচনে গেছেন। তাঁকে আওয়ামী লীগ নিজের লোক মনে করে। তাঁকে জয়ী করতে তাদের গুম করতে হয় তাঁর প্রতিপক্ষকে।’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা কথার জোরে, শুধু চাপার জোরে আজকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বারবার মিথ্যা কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়।’

এ দুই ঘটনার উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, ‘এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? হতে পারে?’ তখন সবাই সমস্বরে জাবাব দেন, না।

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এরা কথার জোরে, শুধু চাপার জোরে আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। বারবার মিথ্যা কথা বলে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়।’ তিনি সবার কাছে জানতে চান, এরই মধ্যে বাজারে গেছেন কি না। প্রশ্ন করেন, ‘বাজারে যাওয়া যায়? ডালের দাম এখন কত? তেলের দাম কত? চালের দাম কত? গ্যাস সিলিন্ডার কিনেছেন?’ বলেন, ‘এক লাফে ২৬৬ টাকা বেড়েছে। মা–বোনেরা জানেন, আজ সংসার চালাতে কী কষ্ট হচ্ছে তাঁদের।’

এই সরকার আমাদের ভবিষ্যৎকে নষ্ট করে দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল আইএমএফের কাছ থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘তারা ঋণ গ্রহণ করছে। আপত্তি নেই। উন্নয়নের জন্য অবশ্যই ঋণ নিতে হবে, ঋণ নিতে হয়। এই ঋণের টাকা দিয়ে যদি পাচার করে কানাডার বেগমপাড়াতে আপনারা বাড়ি তৈরি করেন, ইংল্যান্ড গিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম করেন—সেই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষ পরিশোধ করবে কেন?’

এবার কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আবারও পদযাত্রা শুরু করব। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা, মহানগর। এরপর তাদের (সরকার) যে ক্ষমতার মসনদ, সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির মহাসচিব
সমাবেশে উপস্থিত জনতার একাংশ

পাতাল রেল প্রকল্পের বিষয় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দেখেছি, তারা মেগা প্রজেক্ট আবার শুরু করেছে। পাতাল রেলের প্রজেক্ট তৈরি করছে। সেই পাতাল রেলে ৫২ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আর আমার সাধারণ মানুষকে যে দুস্থ ভাতা দিত, সেই টাকা তারা লুট করেছে। সরকার সাধারণ মানুষের দিকে তাকায় না। তারা দিনে দিনে ফুলেফেঁপে উঠছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে এই আওয়ামী লীগ স্লোগান দিত, ২২ পরিবারকে দূর করতে হবে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই আওয়ামী লীগ ২২ হাজার পরিবার তৈরি করেছে। সেই পরিবার বাংলাদেশের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাচ্ছে এবং লুটের নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।’ তিনি বলেন, ‘যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, তখনই তারা লুট করেছে, সন্ত্রাস করেছে। মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা ভুলে যাইনি, ১৯৭৫ সালের কথা। একদলীয় বাকশাল করেছিল, একই কায়দায় এখনো বিরোধী দলকে দমন করছে।’

সমাবেশে মির্জা ফখরুল গ্যাস–বিদ্যুৎ ছাড়াও চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

বিরোধী দলের এই আন্দোলন বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর কোনো আন্দোলন নয় মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। এই আন্দোলন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। আমরা আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই। সত্যিকার অর্থে একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। সে লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা দিয়েছি।’

সমাবেশে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক মানুষ

সমাবেশে মির্জা ফখরুল গ্যাস–বিদ্যুৎ ছাড়াও চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে যুগপৎ ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এবার কর্মসূচি হবে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আবারও পদযাত্রা শুরু করব। এরপর ধীরে ধীরে উপজেলা, জেলা, মহানগর। এরপর তাদের (সরকার) যে ক্ষমতার মসনদ, সেই মসনদ জনগণ দখল করে নেবে।’

‘রিলিফ চোর, ভোট চোর’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগকে ‘রিলিফ চোর, ভোট চোর, বিএনপির অফিসের (৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে) টাকা চোর’ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম।

আবদুস সালাম বলেন, ‘চোরের দল বড় বড় কথা বলে। কোথার এক হিরো আলম, ওরে হারাতে গিয়েও ভোট চুরি করেছে। আমরা তো দেখতে চাইছিলাম সংসদে হিরো আলম আর মমতাজ বেগমের একটা জুটি হইত পার্লামেন্টে। আহ্, এ রকম একটা জুটি আমাদের দেখতে দিল না।’

‘যাঁকে ত্যাগ করেছি, তাঁকে ভোট দেয় আ.লীগ’

এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা উকিল আবদুস সাত্তারকে জিতিয়ে আনার ঘটনার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘যাঁকে আমরা তালাক দিয়েছি, ত্যাগ করেছি, তাঁকে সোনার প্লেটে ওঠানোর জন্য তাঁর পোলিং এজেন্ট দেয় আওয়ামী লীগ, তাঁর ভোট করে আওয়ামী লীগের এমপি, ভোট দেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, এ কায়দায় নির্বাচনে আমাদের নিতে চান—এটা হবে না।’

সমাবেশে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পালাবার জায়গা না পেলে তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাসায় আশ্রয় নেবেন। কথাটা আমার খুব মনঃপুত হয়েছে। কোনো অসহায়, অপরাধী যদি ভীত হয়ে আশ্রয় চান, যেকোনো ভদ্রলোক আশ্রয় দেবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম নিশ্চয়ই আশ্রয় দেবেন, কারণ তিনি ভদ্রলোকের সন্তান। কিন্তু এর আগে মাফ চান, সব শয়তানি বন্ধ করেন।’

সব মানুষকে আশ্রয় ও হেফাজত দেওয়ার জন্যই বিএনপির রাজনীতি বলে উল্লেখ করেন ফজলুল হক মিলন। উপনির্বাচনে মাইক দিয়ে পুলিশের ভোটার আহ্বান করার ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই রকম তাজ্জব ঘটনা আমার বাপ-দাদার জন্মেও শুনিনি। আগামী সময়ে হয়তো শুধু মাইক দিয়ে ডাকা নয়, পুলিশ ভোট দেওয়ার জন্য লোকজনকে আটক করে নিয়ে যাবে, গ্রেপ্তার করবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আহমেদ আজম খান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন প্রমুখ।