সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

অবসরে বই লিখবেন, সক্রিয় রাজনীতি আর নয়

মো. আবদুল হামিদ
ফাইল ছবি: পিআইডি

সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আর সক্রিয় রাজনীতি করবেন না। জানিয়েছেন, তিনি এখন অবসরজীবনে বাড়ি বসে লেখালেখি করবেন।

দুই মেয়াদে টানা ১০ বছর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর আজ সোমবার এ পদ থেকে বিদায় নিলেন আবদুল হামিদ। আজ নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের শপথ গ্রহণের পর বঙ্গভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আবদুল হামিদ।

সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতির কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, পরবর্তী জীবনে কী করবেন? জবাবে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি তো এখন রিটায়ার্ড হয়ে গেছি। দোজ হু আর টায়ার্ড, দে গো ফর রিটায়ার্ড। এখন বাড়ি বসে থেকে কিছু লেখালেখি করতে পারি। কিন্তু সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করার পরিকল্পনা নেই।

কারণ, দেশের মানুষ আমাকে এত বড় ইজ্জত দিয়ে দুই মেয়াদে দেশের সর্বোচ্চ পদে রাষ্ট্রপতি করেছে। সুতরাং আবার আমি রাজনীতি করা বা অন্য কোনো পদে যাব—এটা করলে এ দেশের মানুষকে আমি হেয় করব। সুতরাং সেটা আমি করব না।’

সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে চলতে ভালোবাসেন। বলছেন, ১০ বছর অনেকটা বেড়াজালের মধ্যে ছিলেন। এখন কীভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশবেন? এর উত্তরে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি ১০ বছর বন্দী থাকলেও তাদের (সাধারণ মানুষ) প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল না, তা নয়। সেটা ছিল। তবে কাছে গিয়ে সবার কাছে প্রকাশ করতে পারি নাই। এখন অনেকের কাছে সেটা প্রকাশ করতে পারব।’

নতুন রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে আবদুল হামিদ বলেন, ‘ওনার সাংবিধানিক দায়িত্ব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালন করবেন—এটাই সারা জাতির প্রত্যাশা এবং আমারও প্রত্যাশা।’

দুই মেয়াদে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালনের ঘটনা প্রতিবেশী দেশগুলোয় হয়নি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘এটা বাংলাদেশে হয়নি, পার্শ্ববর্তী ভারতে দুবার হয়েছে, কিন্তু ১০ বছর কেউ ছিল না। আবার পাকিস্তানে তো পাঁচ বছরের ওপরে কেউ ছিল না। সুতরাং এ উপমহাদেশেই আমার মনে হয় আমিই সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কারণ, ১০ বছর ছাড়াও আরও বোধ হয় ৪১ দিন বেশি আছে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়।’

নিজের রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার ব্যাখ্যায় বিদায়বেলা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমি স্পিকার ছিলাম। আমার এখানে আশার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু আমি আসছি আরকি। আমি পার্লামেন্টে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। কারণ, ওখানে নিজেকে মুক্ত বলে মনে হতো। আমি জানি যে এখানে এলে অনেকটা বেড়াজালের ভেতরে পড়ে যাব। যা-ই হোক, তবু ১০ বছর মোটামুটি পার করে ফেলেছি।’

মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল শপথ নিয়ে সেদিনই বঙ্গভবনে উঠেছিলেন। যদিও এর আগে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের অসুস্থতার সময় এবং তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় সংসদের স্পিকার থাকার কারণে মো. আবদুল হামিদ  ৪১ দিন ভারপ্রাপ্ত ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে সে সময় তিনি বঙ্গভবনে ওঠেননি।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে উঠেছিলেন। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার গৌরব অর্জন করেন তিনি।

সংবিধান অনুসারে, দুই মেয়াদের বেশি কেউ রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবদুল হামিদ ছাড়া আরও ১৬ জন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

আবদুল হামিদ স্বাধীন বাংলাদেশে সাতবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংসদে নিজের এলাকা কিশোরগঞ্জের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেছেন। এ ছাড়া সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তাঁর আসনে এখন সংসদ সদস্য হয়েছেন ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক।