মুন্সিগঞ্জ–৩ আসনে হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র বেলা একটার দিকে পুরোটাই ফাঁকা দেখা গেছে।
মুন্সিগঞ্জ–৩ আসনে হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র বেলা একটার দিকে পুরোটাই ফাঁকা দেখা গেছে।

মুন্সিগঞ্জ–৩: ভোটকেন্দ্র থেকে ফোন করে ইউপি চেয়ারম্যান বললেন, ‘লোক পাঠাও’

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার লঞ্চঘাট থেকে মেঘনা নদী পার হয়ে গজারিয়া উপজেলায় স্পিডবোটে যেতে সময় লাগল ১০ মিনিট। নদীর পাড়েই হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র। এটি মুন্সিগঞ্জ–৩ আসনের একটি কেন্দ্র।

বেলা একটায় ভোটকেন্দ্রে ঢুকে দেখা গেল পুরোটাই ফাঁকা। এ সময় একজন ভোটারও চোখে পড়ল না।সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং কর্মকর্তা, এজেন্টরা কেউ হাঁটছেন, কেউ বসে আছেন, কেউ গল্প করছেন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৭৫০। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৪ শতাংশ। মানে হচ্ছে ভোট পড়ছে কম।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সময় সেখানে এলেন হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু। শোনা গেল, তিনি মুঠোফোনে একজনকে বলছেন, ‘তোমার ওখান থেকে ভোটকেন্দ্রে লোক পাঠাও।’

হোসেন্দি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু (ডানে)

ফোন শেষে এই প্রতিবেদক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘কাকে বললেন কেন্দ্রে ভোটার আনতে? ভোটার উপস্থিতি কম কেন?’ তখন তিনি বলেন, ‘এই এলাকাটি মূলত বিএনপি অধ্যুষিত। এ জন্য লোকজন ভোটকেন্দ্রে আসছে না। লোকজনকে ভোটকেন্দ্রে আনতে ওয়ার্ড মেম্বারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভোটার নিয়ে আসবেন।’ এ সময় তিনি পাশে থাকা দুজন কর্মীকে বলেন, ‘তোমরা ভোটার নিয়ে আসো।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মূলত দুজন প্রার্থীর মধ্যে। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন মৃণাল কান্তি দাস। কাঁচি প্রতীকে নির্বাচন করছেন মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লব। যদিও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১০ জন।

হোসেন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক মূলত নৌকা প্রতীকের হয়ে কাজ করছেন। তিনি তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান। হোসেন্দি স্কুল কেন্দ্রে বুথ আছে আটটি। একটি বুথে কতজন প্রার্থীর এজেন্ট আছে তা দেখতে গিয়ে জানা গেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী কাঁচি প্রতীকের এজেন্ট নেই। তবে সেখানে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট আছে।

এ সময় শাহাবুদ্দিন নামে একজন ভেতরে আসলেন। তাঁর গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড দেখা গেল।  তিনি এই প্রতিবেদককে বুথ থেকে বাইরে নিয়ে গেলেন। নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের আধিপত্যের কারণে কেন্দ্রে বেশিক্ষণ থাকা গেল না।

হোসেন্দি বাজার ঘাটে কয়েকজনকে গোসল করতে দেখা গেল। তারা সবাই এই কেন্দ্রের ভোটার। তবে কেউ ভোট দিতে যাননি। কেন যাননি এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন্দি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ‘সবাই তো তারা তারা। ভোট দিয়ে লাভ কি।’

নদীর পারে জাহাঙ্গীরের দোকানে দেখা গেল মধ্যবয়সী ৮ থেকে ১০ জনকে। তাঁরা জানালেন পরে ভোট দিতে যাবেন।

শফিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহপরান নামের দুই যুবক এবার প্রথমবারের মতো ভোট দিয়েছেন। ভোট দিতে পেরে তারা খুশি বলে জানালেন।