এবার আলোচনায় নতুন দুই স্থান

১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ কোথায় হবে– তা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতির দাবি থেকে সরে এসেছেন বিএনপি নেতারা
ছবি: শুভ্র কান্তী দাস

রাজধানীর নয়াপল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে এবার বিএনপির গণসমাবেশের জন্য আলোচনায় এল কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ। বৃহস্পতিবার রাতে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের দীর্ঘ আলোচনার পর দুই পক্ষ এই জায়গায় পৌঁছায় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের সঙ্গে এই দফায় আলোচনায়ও বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলা হয়। বিকল্প হিসেবে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ, মিরপুরের কালশীর কথাও আসে। বিএনপির নেতারা প্রথমে নয়াপল্টন, এরপর আরামবাগ, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট স্কুল মাঠ, জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামে সমাবেশের অনুমতি চায়। দুই পক্ষের আলোচনার একপর্যায়ে মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠের কথাও আসে। এ পর্যায়ে উভয় পক্ষ কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশের বিষয়ে একমত হয়।

রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের বৃহস্পতিবার সিএমএম আদালতে আনা হয়

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা (বুলু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় আড়াই ঘণ্টার আলোচনার পর আমরা কমলাপুর স্টেডিয়াম ও মিরপুর বাঙলা কলেজ মাঠ—এ দুটি জায়গা নিয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি। এখন যেটা পছন্দ হয়, আমরা সেটার কথা তাদের জানিয়ে দেব। এ ক্ষেত্রে কমলাপুর স্টেডিয়াম আমাদের প্রথম পছন্দ।’

সমাবেশের জন্য ওই দুটি স্থান নিয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদও। বৈঠক থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুটি স্থানই আমরা দেখব, তাঁরাও দেখবেন। দুটির মধ্যে একটি ঠিক হবে।’ তিনি মনে করেন, সমাবেশস্থল নিয়ে যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, তা কেটে যাবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির সমর্থকেরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়। রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড় এলাকায়

প্রায় তিন মাস আগে বিএনপি ১০ বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঢাকায় গণসমাবেশ করতে বিএনপি নয়াপল্টনের জন্য অনুমতি চেয়ে গত ১৩ নভেম্বর ও ২০ নভেম্বর ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদন করে। আগামী শনিবার সমাবেশের দিন। কিন্তু এখনো সমাবেশের স্থান বুঝে পায়নি বিএনপি।

এই সমাবেশস্থল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বুধবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, কোনোভাবেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, আমরা আামাদের সমাবেশ অনুষ্ঠান করব। এর জন্য চেয়েছিলাম নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে এই সমাবেশটাকে শান্তিপূর্ণভাবে করার ব্যবস্থা করা।’

এই সংবাদ সম্মেলনের দুই ঘণ্টা পর এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের কার্যালয়ে যান। রাত সাড়ে নয়টায় বৈঠক শেষ হয়।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা হোক বা না হোক—ঝুঁকি নিয়ে হলেও বিএনপি গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলছেন, গত বুধবার নয়াপল্টনে পুলিশের গুলিতে এক নেতা নিহত হওয়াসহ অনেককে আহত করা এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শত শত নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা মনে করছেন, ঢাকার গণসমাবেশের স্থান নিয়ে সরকার যতই কঠোর অবস্থান নিক না কেন, বিএনপির পেছনে সরার জায়গা নেই।

নয়াপল্টনে অবরোধ, বুধবারের ঘটনায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে কীভাবে বিএনপি সমাবেশ করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই গণতন্ত্রকে তারা পুরোপুরিভাবে লুট করে নিয়ে গেছে। সেটাকে ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণ ফিরে দাঁড়াচ্ছে। নদী সাঁতরে পার হয়ে, ১০০ মাইল সাইকেলে, হেঁটে, চিড়ামুড়ি, গুড় নিয়ে তারা সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হয়েছে। অপেক্ষা করুন, ঢাকায় যা দেখবেন, তা আপনারা স্বচক্ষে দেখবেন।’

পুলিশ বলছে, বিএনপির কার্যালয়ে ১৬০ বস্তা চাল, দুই লাখ পানির বোতল ছিল। এটা একটা যুদ্ধংদেহী ব্যাপার কি না, সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘(যুদ্ধংদেহী) কেন, যদি চাল পেয়ে থাকে, চাল তো বিস্ফোরক নয়। চাল কি যুদ্ধংদেহী কোনো ব্যাপার? এমনও তো হতে পারে যে সমাবেশে যাঁরা আসবেন, তাঁদের জন্য খিচুড়ি রান্না করার জন্য সেটা হতে পারে। তবে ওখানে ১৬০ বস্তা চাল, দুই লাখ পানির বোতল রাখার কোনো জায়গাই নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।’

বিএনপির কার্যালয় থেকে ককটেল উদ্ধারের ঘটনার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ নিজেদের রেখে আসা বোমা উদ্ধার ও বিস্ফোরণের নামে নাটক সাজিয়েছে। শুধু পুলিশ নয়, পুলিশের সঙ্গে ডিবি, সোয়াট বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে নিয়োজিত ছিল।

দলীয় কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আইন হচ্ছে কোনো বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হলে সেই বাড়ির মালিককে সঙ্গে রাখতে হবে এবং নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। এ ধরনের তল্লাশি চালাতে হলে সার্চ ওয়ারেন্ট ইস্যু করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুই করা হয়নি।