দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন ভাগাভাগির জন্য বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষায় করতে বললেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘সমঝোতা আমাদের মধ্যে আছে। এখানে কোনো প্রকার অশোভন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। আমরা বসেই আলোচনা করেছি। আজকেও টেলিফোনে কথা বলেছি। আমাদের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যা জাতীয় পার্টিকে আমরা দিয়েছি। সবশেষ কতজনে সমঝোতা হলো, সেটা জানতে বিকাল পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
আজ রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। আজ বিকেল চারটায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময়। এরপরই নিশ্চিত হয়ে যাবে কতটি দল, কয়টি আসনে নির্বাচন করছে।
জাপার সঙ্গে সমঝোতা করা আসনে নৌকার প্রার্থীদের প্রত্যাহার করা হবে কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘নৌকা প্রত্যাহার করতে তো হবেই। আমরা নৌকা প্রত্যাহার করে নেব।’
জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে গত এক সপ্তাহে গোপনীয়ভাবে চার–পাঁচবার বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত ২৬টি আসনে সমঝোতা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে। ২০০৮ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে ভোটে অংশ নিয়ে আসছে জাপা।
আসন সমঝোতা নিয়ে জাতীয় পার্টির সন্তুষ্ট কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের কথা হচ্ছে। তারা কখনো ক্ষুব্ধ হয়েছে বলে জানা নেই। তাদের আসন বাড়ানোর দাবি থাকতেই পারে। যেসব আসনগুলোতে আমরা সমঝোতা করব। সেখানে আমাদের নৌকা প্রার্থীকে প্রত্যাহার করতেই হবে।’
আসন সমঝোতার মাধ্যমে কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নৌকা প্রার্থী তুলে নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী সব আসনে থাকছে। তারা কি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নয়? নৌকা না থাকলেও ২৮টি দল তো নির্বাচনে থাকছে।’
আসন সমঝোতা না হলে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার মনে হয় না জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যাবে। তারা নির্বাচন করবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত তারা পরিবর্তন করবে কি না, আমার জানা নেই।’
১৪ দলের শরিকদের সাতটি আসন ছাড়ের কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এখন তা কমে ছয়টি হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকে নিয়ে বিএনপি সারা দেশে নাশকতা করছে। তারা যত বাধা দেবে, নির্বাচন বাধাপ্রাপ্ত হবে না। এটা আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার।
বিএনপির নেতাদের জেলে রেখে সরকার নির্বাচন করছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা ৩৪ জন সাংবাদিক কে পিটিয়ে আহত করেছে এবং একজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের কি বিচার হবে না? সেটার কি মামলা হবে না?
বিএনপি নেতা মঈন খান বিজয়ের দিনকে পরাজয়ের দিন বলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীতে একটা দেশ দেখান যেখানে সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচন হয়। ক্ষমতাসীন সরকার থাকবে না এটা কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন? বিজয়ের দিনকে উপহাস করে পরাজয়ের দিন বলছে। ৭১–এর পরাজয় তো আপনাদের আর জামায়াতের। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের দর্শকদের পরাজয় হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যারা বিশ্বাস করে, তাদের জন্য এটা বিজয়ের দিন।’
বিএনপি মানুষের জন্য রাজনীতি করে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস জানা নেই। ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কা নির্বাচন, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি, জিয়ার হ্যাঁ, না ভোট তারা করেছে। ঢাকা-১০ ও মাগুরার প্রহসনমূলক নির্বাচন এগুলো তো বিএনপির সৃষ্টি। বিএনপি আবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে কোন মুখে? তাদের শাসনামলে কোন নির্বাচন দ্বারা সুষ্ঠু করেছে? এ দেশে আওয়ামী লীগই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে।
আগামী মঙ্গলবার বিএনপির ডাকা হরতাল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তারা তো হরতাল অবরোধ ডেকেই যাচ্ছে। এখানে আমাদের তো কিছু করণীয় নেই। এগুলো নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করেন। আওয়ামী লীগ তো নির্বাচনের আচারণ বিধি মেনেই চলছে। আমরা ১৬ তারিখ বিজয় মিছিল না করে, সেটা ১৮ তারিখ নিয়েছি। তারা তো প্রতিদিনই ট্রেনে বাসে আগুন দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি গাজীপুরে গ্যাসলাইন পর্যন্ত কেটে দিয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল ও মির্জা আজম প্রমুখ।