নির্বাচন
নির্বাচন

বিএনপির ১৮ নেতাসহ ৩৮ জন উপজেলা নির্বাচনে

বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির অন্তত ৩৮ জন সাবেক-বর্তমান নেতা এবং তাঁদের স্বজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। প্রথম দফার নির্বাচনে তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এই ৩৮ জনের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা। বাকি ২০ জনের মধ্যে ১১ জন দল থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত এবং বিএনপির সাবেক নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতাদের আত্মীয়স্বজন বা এই দলের লোক হিসেবে পরিচিত আরও ৯ জন নির্বাচনে রয়েছেন।

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে সারা দেশের ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এই ধাপে দলের সাবেক-বর্তমান মিলে ৪৯ নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। গতকাল সোমবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর মধ্যে ১১ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। অনেকে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ১৫ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তের পর দলটির নেতৃত্বের চেষ্টা ছিল দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে ফেরানোর। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতাদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্ত এবং নেতাদের সব চেষ্টা-তদবির উপেক্ষা করে ৩৮ জন নির্বাচন করছেন। এর মধ্যে দলের থানা-উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতা রয়েছেন।

আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে ১৬০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপেও বিএনপির অন্তত ৩৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক মাসুদুল আলম, পঞ্চগড় সদরে জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক আবু দাউদ প্রধান, ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার সদস্য মো. শাহজাহান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন।

আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার সময় কেঁদে ফেলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও দলের বৃহত্তর স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছি। আপনারা এই সরকারের অধীন অনুষ্ঠেয় সব নির্বাচন বর্জন করুন, কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’

যাঁরা নির্বাচন করছেন

আনোয়ার হোসেন ও নুরুজ্জামান লস্কর চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও সরাইল উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি হানিফ আহমেদ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার। দুজনই নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

হানিফ আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমি এখন দলীয় কোনো পদে নেই। তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করব। নির্বাচনী প্রচারণায় বেশ সাড়া পাচ্ছি।’

আর শামীমা আক্তার গতকাল বলেন, ‘কুমিল্লার বিভাগীয় নেতারা আমাকে ফোন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন। আমি তাঁদের বলেছি, নির্বাচন চালিয়ে যাব। এর আগে আমি দুটি নির্বাচন করে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি। এবার জয়ী হব।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁদের মধ্যে আরও আছেন ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শামসুর রশিদ, ফুলপুর পৌরসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান, হালুয়াঘাটে ময়মনসিংহ উত্তর জেলার সদস‌্য আবদুল হা‌মিদ, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফায়জুল কবির তালুকদার, ফরিদপুর সদরের সাবেক সভাপতি রউফ উন নবী ও যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সভাপতি নগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের সাবেক নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাটের আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস, সিলেটের বিশ্বনাথের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সহসভাপতি সারওয়ার হোসেন, নাটোরের নলডাঙ্গার সাবেক সদস্য সরদার আফজাল হোসেন, নাটোর সদরে জেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন মৃধা, নওগাঁর, ধামইরহাটে আয়েন উদ্দিন, মহাদেবপুরে দলের সহসভাপতি আবদুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন নির্বাচন করছেন।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যাঁরা নির্বাচনে থাকছেন, শিগগিরই তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত রোববার পটুয়াখালী ও কক্সবাজারের দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটি উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়া নেতাদের প্রতি একটি বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ যদি দলের সিদ্ধান্ত না মানে, বুঝতে হবে সরকারি দলের কোনো টোপে পড়েছে। দেশের মানুষ শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচনকে মূল্য দেয় না। কারণ, এখানে ভোটের আগে ভোট হয়ে যায়। এরপরও টোপে পড়ে দলের নীতি-আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিশ্চয়ই অশুভ চক্রের সঙ্গে আঁতাত।’

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রথম আলোনিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]