সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা

কালোটাকা সাদা করার আরও সহজ সুযোগ চাইলেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আরও সহজ করার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন। আজ রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি জানান। তিনি মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়নি; বরং বৈধ অপ্রদর্শিত আয়কর দিয়ে প্রদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী জুলাই থেকে এক বছরের জন্য কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে বৈধ বা সাদা করা যাবে। একইভাবে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও এলাকাভেদে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে। একেক এলাকার জন্য বর্গমিটার অনুসারে নির্দিষ্ট কর দিতে হবে।

প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এখনো সংসদে সাধারণ আলোচনা শুরু হয়নি। সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়েই কালোটাকা সাদা করার বিষয়ে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন।

কিছু বুদ্ধিজীবী আর তথাকথিত বিরোধী দল টক শোতে যা খুশি বলেন। একজন ব্যারিস্টার আছেন, তাঁকে ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটক দেখানো দরকার। তাঁর মুখে মিষ্টি নেই, মনে হয় মধু খাওয়ায়নি।
—শফিকুর রহমান, সরকারি দলের সংসদ সদস্য

সোহরাব উদ্দিন বলেন, অর্থ পাচারের কারণে ডলার-সংকট হচ্ছে। অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া না হলে অর্থ পাচার বন্ধ হবে না, এটি বলে আসছেন তিনি। এবার বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। আসলে এটি ভুল তথ্য। কালোটাকা সাদা করা নয়, বৈধ অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্য সোহরাব বলেন, এ ক্ষেত্রে কর ৫ শতাংশ করলেও অসুবিধা নেই। ১৫ শতাংশ কর অনেক বেশি। এ হারে কর দিতে হলে অনেকে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করবেন না। এটি কমাতে হবে।

কর কমানো হলে অপ্রদর্শিত আয়ের প্রদর্শন বেশি হবে মন্তব্য করে সোহরাব উদ্দিন বলেন, এতে রাষ্ট্রের কর বাড়বে, বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে। এ ক্ষেত্রে আরও সুযোগ দেওয়া যায়। একসময় এই সুযোগ ছিল। ইন্ডাস্ট্রি করতে জমি, যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না।

ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণ কমাতে হবে

একই আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, ২০১৭-১৮ সালে ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকার নিয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। চলতি অর্থবছরে এ ঋণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। এদিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া দরকার। সরকারের উচিত ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ কম নিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়তে দেওয়া।

সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো প্রকল্প নেওয়া হলেই আগে গাড়ি কেনা হয়। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জুন মাস এলে তড়িঘড়ি করে টাকা তোলা হয়।

এই সংসদ সদস্য বলেন, ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যায়। এতে শিল্প-বাণিজ্যের অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না।

মধ্যবিত্তের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার আহ্বান

সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো প্রকল্প নেওয়া হলেই আগে গাড়ি কেনা হয়। এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জুন মাস এলে তড়িঘড়ি করে টাকা তোলা হয়।

সরকারি দলের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র্য অনেক কমেছে। কিন্তু কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক কারণে এখন মধ্যবিত্তের অনেকের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। ন্যায্যমূল্যে টিসিবির ট্রাকে বিভিন্ন দ্রব্য বিক্রি করা হয়। মধ্যবিত্তের অনেকে এখানে দাঁড়াতে লজ্জাবোধ করেন। মধ্যবিত্তের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো।

‘তাঁর মুখে মিষ্টি নেই, মনে হয় মধু খাওয়ায়নি’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, ‘কিছু বুদ্ধিজীবী আর তথাকথিত বিরোধী দল টক শোতে যা খুশি বলেন। একজন ব্যারিস্টার আছেন, তাঁকে ‘মুখরা রমণী বশীকরণ’ নাটক দেখানো দরকার। তাঁর মুখে মিষ্টি নেই, মনে হয় মধু খাওয়ায়নি।’ কাউকে মরণচাঁদের এক কেজি মিষ্টি ওই ব্যারিস্টারের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে নাগরিক সমাজের সমালোচনা করে সরকারি দলের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ‘যারা কাজ করলে সমাজ কলুষিত হবে, গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র ধ্বংস হবে—সেই শক্তিগুলো যখন ক্ষমতায় আসে তখন আমাদের সিভিল বাবুরা অনেক আনন্দে দিন কাটান। তাঁদের প্রতি স্পষ্ট কথা, আপনারা সমালোচনা করেন, সেটা আমরা সহ্য করি, সরকারি দলে আছি, চামড়া অবশ্যই আমাদের মোটা, সমালোচনা ধারণ করতে পারি। আপনাদের ন্যায্য কথাকে বঙ্গবন্ধুকন্যা গ্রহণ করেন।’
বিমানবন্দরে প্রবাসফেরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানান আবু সাঈদ আল মাহমুদ।