প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে স্মরণে রাখার মতো কিছুই আনতে পারেননি: খন্দকার মোশাররফ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মহিলা দলের শোভাযাত্রা। ঢাকা, ৯ সেপ্টেম্বর
ছবি: দীপু মালাকার

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাবেন দেশের কূটনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য, এটাই দেশের জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু প্রতিবার তিনি ভারতে গিয়ে কেবল দিয়ে এসেছেন। কিছু নিয়ে এসেছেন বলে দাবি করতে পারেননি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই স্বীকার করেছেন, ভারতকে যা দিয়েছেন, সারা জীবন ভারত স্মরণ রাখবে। কিন্তু আমাদের স্মরণে রাখার মতো এমন কিছু এখন পর্যন্ত আনতে পারেন নাই।’

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শোভাযাত্রা করা হয়। শোভাযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরের আগে অনেক কথা বলা হয়েছিল দাবি করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বলা হয়েছিল অনেক চুক্তি হবে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয় নাই। শুধু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। যার অর্থ ইচ্ছা প্রকাশ করা। অর্থাৎ এটার ইচ্ছা প্রকাশ করছি, ওটার ইচ্ছা প্রকাশ করছি। কিন্তু চুক্তি না হলে এর কোনো মূল্য নেই। অতএব এই সরকার কূটনীতিতেও সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’

ভারতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কোনো আলাপ–আলোচনা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যা, সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মাদক এ দেশে আসে। এগুলো বন্ধ করার জন্য কোনো কথা হয়নি। বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে কোনো কথা হয়নি। আমরা জানি না এই সফরের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না। জনগণ এটা জানতে চায় যে প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী নিয়ে এসেছেন।’

এই সরকারের পক্ষে আর কিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারবে না। যারা লুটপাটের জন্য অর্থনীতিকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে, তারা সেই অর্থনীতিকেও পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। ভোটের অধিকার তারা দিতে পারবে না। কারণ তারা ভোট ডাকাত; ভোট চুরি করে। অতএব দেশ ও দেশের জনগণকে এই সরকারের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’

এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হবেও না—এমন মন্তব্য করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই সরকারের অধীন নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। সরকারের পতন ঘটাতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কোনো স্বৈরাচারী সরকার স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে যায়নি। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে হবে। রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা করতে হবে।’

সমাবেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশে প্রধানমন্ত্রী যেতেই পারেন; পাশের দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটা কথা বলেছেন, সেই কথাটা যে একেবারে মিথ্যা, সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ, যে প্রধানমন্ত্রী নিজের দেশের বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেন, তিনি খুব ভালো করেই জানেন, অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি টিকতে পারবেন না। তাই তাঁকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য অন্য কোনো পদ্ধতি নিতে হবে।’

মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে শোভাযাত্রার আগে আয়োজিত এ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। সঞ্চালনায় ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

সমাবেশ শেষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ের উদ্দেশে শোভাযাত্রা শুরু করেন মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রা কিছু দূর অগ্রসর হয়ে শেষ হয়। এ সময় মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা ‘হামলা করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না, মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়া-লও লও লও সালাম’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।