শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি  শেখ হাসিনা
শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি  শেখ হাসিনা

জাতীয় মুদ্রায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি চান নেতারা, শেখ হাসিনা বললেন ‘ভাগো’

দেশের জাতীয় মুদ্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি দেখার দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য দিয়েছেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বাকী বিল্লাহ বলেন, ‘জাতীয় মুদ্রায় আপনার ছবি দেখতে চাই মাননীয় নেত্রী। আপনার ছবি বাংলাদেশের মুদ্রায় দেখলে আমরা শান্তি পাব।’
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাকায় একমাত্র জাতির পিতার ছবি থাকবে।’ রসিকতা করে তিনি বলেন, ‘মাইর দিবো তোমাকে, ভাগো।’

আজ শনিবার বেলা তিনটায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়েছে। অধিবেশনের শুরুতে বিভিন্ন বিভাগের একজন করে নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে জামালপুর জেলার সভাপতি বাকী বিল্লাহ দেশের মুদ্রায় শেখ হাসিনার ছবি রাখার প্রস্তাব করেন।

নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে শুরু হওয়া সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের উদ্বোধন করেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিভাগগুলো থেকে একজন করে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

বক্তব্যের এই পর্যায়ে প্রথমেই রংপুর বিভাগ থেকে ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কোরাইশীকে বক্তব্য দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। বক্তব্যে সাদেক কোরাইশী গত নির্বাচনের আগে ঠাকুরগাঁও জেলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী যেসব ওয়াদা করেছিলেন, তার সব প্রতিশ্রুতি আগামী নির্বাচনের আগে পূরণ করার আহ্বান জানান।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাদেক কোরাইশী।

রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, ‘অনেকে দল বুকে লালন করছি, অনেকে দল বিক্রি করে খাচ্ছি। আগামীতে নির্বাচনে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে মনোনয়ন দিলে যতই মিথ্যাচার হোক, আপনার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তৃণমূল পর্যায়ে সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সবাই মিলে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরলে আমাদের জয় নিশ্চিত হবে।’

খুলনা বিভাগের নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুভাষ বোস বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই।’

বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, ‘মাননীয় নেত্রী আপনার বিকল্প আপনি নিজেই। পটুয়াখালী এখন আর খালি নেই, পটুয়াখালী ভরা। পটুয়াখালীর চারটি আসন আপনার নিজের।’ মাঠপর্যায়ে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের মধ্যে থেকে যেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেই অনুরোধ জানান তিনি।

সিলেট বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে যে কমিটি আসবে, সেই কমিটির প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। সারা বাংলাদেশে বিএনপির অপপ্রচার ও কুৎসা রটনা চলছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেক নেতা-কর্মীর ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। সারা বাংলাদেশে উন্নয়ন চলছে কিন্তু আমাদের বিশ্বনাথ ওসমানীনগরে উন্নয়ন পিছিয়ে আছে। কারণ, আমাদের দলীয় সংসদ সদস্য নেই। সিলেটে সহযোগী সংগঠনের গতি আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

সারি বেঁধে সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করছে নেতা-কর্মীরা

চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এই দেশ আমার গর্ব, এ মাটি সোনা। শেখ হাসিনা ছাড়া বাঙালির বিকল্প নেই।’

ঢাকা বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্ত যাঁরা করে তাদের প্রচার সেল এত শক্ত, আমাদের প্রচার সেল এত শক্ত নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন যদি আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার করতে পারি, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে।’

আওয়ামী লীগের সম্মেলন অধিবেশনে সারা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে দলটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন।

তাঁরা ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করবেন। বিভাগ থেকে নেতাদের বক্তব্যের পর কাউন্সিলরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন শেখ হাসিনা। এই বৈঠক শুরুর আগে রাস্তায় বসানো মাইকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, দলের বাজেট, গঠনতন্ত্র সংশোধন, ঘোষণাপত্র সংশোধনে কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।