প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকে নতুন করে মেরামতের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বলে মনে করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির মতে, জনগণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে এই সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে দেশে আর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ফিরে না আসে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় সুজনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সুজন-এর আহ্বান’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সহিংসতা বন্ধ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্ষা করা ও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গতকাল একটি অভূতপূর্ব, অভাবনীয় ও অকল্পনীয় বিজয় অর্জিত হয়েছে। অনেকের মতে এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। গত ১৫ বছর আমরা অনেকটা কারাগারের মধ্যে ছিলাম। এ সময় আমরা আমাদের বাক্স্বাধীনতা ও অন্যান্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আমাদের তরুণেরা মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য উত্তরসূরি।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, এই বিজয়ের মাধ্যমে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রকে নতুন করে মেরামতের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও বাসযোগ্য রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জনগণ দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে এই সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের নির্বাহী সদস্য শাহদীন মালিক বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন রকম দুর্বলতা ছিল। রাজনৈতিক দলের মধ্যে দায়িত্বশীলতা নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকে হালুয়া-রুটির লোভে বিবেক বিসর্জন দিয়েছেন, নাগরিক সমাজেরও অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। সাংবাদিকদেরও অনেক লজ্জাজনক পক্ষপাত ছিল। এসব কারণে কর্তৃত্ববাদী শাসন গেড়ে বসেছিল। ভবিষ্যতে যাতে দেশে আর স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ফিরে না আসে সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’
শাহদীন মালিক আরও বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ কারও কাম্য নয়। গতকাল যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা সমর্থন করি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সবার সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্র মেরামতের চেষ্টা করবেন। এটা কোনো রকেট সায়েন্স না। কিছু সংস্কার স্বল্পমেয়াদে করা যাবে, কিছু সংস্কার করতে সময় লাগবে; কিন্তু আমাদের আশাবাদী হতে হবে।’
সুজনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, চূড়ান্ত একনায়কতন্ত্রে চলে গিয়েছিল। তাই সব তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে। শুধু নির্বাচন সমাধান না। অনেক সংস্কার লাগবে। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পুরো ব্যবস্থায় বদল আনতে হবে যেন শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার পুনরায় তৈরি হতে না পারে।
লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তাতে জনগণের প্রতি কয়েকটি আহ্বান জানানো হয়। তার মধ্যে কারও বিজয় উদ্যাপনের ভাষা যেন সহিংসতা, লুটপাট বা ধ্বংসযজ্ঞ না করা, নিজের হাতে আইন তুলে না নেওয়া, প্রাণহানিসহ রাষ্ট্রীয় বা ব্যক্তিগত সম্পদ ধ্বংসের উদ্যোগ রুখে দাঁড়ানো, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুসহ আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো অন্যতম।