ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান হবে শিগগির: মির্জা ফখরুল

সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আবারও বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এ কথা বলার অবকাশ নেই যে মানুষ জেগে ওঠেননি। হয়তো তাঁদের জেগে ওঠাকে কাজে লাগিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা এখনো সম্ভব হয়নি। সে আন্দোলন নিঃসন্দেহে আরও বেগবান হবে অতি শিগগির।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল।

বর্তমান ‘দখলদার’ সরকারকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ‘প্রধান শত্রু’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যারা এর (সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের) বিরোধিতা করছি, আমাদের মূল লক্ষ্যটা কী, আমাদের প্রধান শত্রু কে? আমাদের প্রধান শত্রু হচ্ছে এই দখলদার সরকার।’

এই শত্রুকে সব সময় মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

দেশ এখন সর্বগ্রাসী সংকটে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে রাজনৈতিক সংকট, অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকট। এই সরকার কীভাবে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত করছে, তা আমরা প্রতিদিন দেখছি। এই সরকারের কুকীর্তিগুলো এককথায় বলে শেষ করা যাবে না। প্রথম যে সর্বনাশটা করেছে, বাংলাদেশের রাজনীতির যে কাঠামো, সেটা তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, আগে তারা বাংলাদেশের রাজনীতির কাঠামো ধ্বংস করেছিল। এবারও করেছে ভিন্ন কায়দায়, ছদ্মবেশী আবরণে। সত্যিকার অর্থে একদলীয় বাকশালি ফ্যাসিবাদী সরকার তারা গঠন করেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিগুলোর যে কাঠামো, সেটাও তারা নষ্ট করে দিয়েছে।

‘এখন অর্থনীতিবিদেরা বলতে শুরু করেছেন’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আগে শুধু আমরাই বলতাম, যারা বিরোধিতা করতাম। এখন দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদেরা বলতে শুরু করেছেন। কারণ, তাঁরা দেশপ্রেমী, তাঁরা দেখছেন যে যদি এ রকম চলতেই থাকে, তাহলে দেশের অস্তিত্বই টিকে থাকবে না। গতকাল নোয়াবের (সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন) আলোচনা সভায় দেখেছেন, দেশের অর্থনীতিবিদেরা অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত যে অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে চলেছে, তাতে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই মিলবে না।’

মানুষ জেগে উঠেছেন বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ কথা বলার অবকাশ নেই যে মানুষ জেগে ওঠেননি। আমরা দেখেছি, মানুষ নদী সাঁতরে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, সব প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে ১০০ মাইল সাইকেলে চড়ে, কেউ হেঁটে সভা-সমাবেশে যুক্ত হয়েছেন এই আশায় যে পরিবর্তন হবে। হয়তো তাঁদের জেগে ওঠাকে কাজে লাগিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা এখনো সম্ভব হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ কবি বুলবুল খান বাবুর একটি কবিতার পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করেন, ‘হে অস্থির যুবকেরা শোনো, হতাশাই শেষ কথা নয়। যেন প্রতি রজনীর পরে নতুন সূর্যোদয়।’ তিনি বলেন, এটাই হচ্ছে মূলকথা।

চলমান ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এ ধরনের আন্দোলনে একবারেই যে সব হয়ে যায়, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। ষাট-সত্তরের দশকে আমরা বহু আগে থেকে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সফল হয়েছি কিন্তু ১৯৭১ সালে। একইভাবে স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে যখন আমরা আন্দোলন করেছি, অনেকগুলো আন্দোলন হয়েছে, সে আন্দোলন সফল হয়নি। শেষে এসে নব্বইয়ের আন্দোলন সফল হয়েছে। আন্দোলনের এ চরিত্র মনে রাখতে হবে।

আন্দোলনে অর্জন

চলমান আন্দোলনে ‘ইতিমধ্যে অনেক অর্জন হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে কেউ ডান চিন্তা, কেউ বাম চিন্তার, কেউ অতি বাম চিন্তা—সব মিলিয়ে আন্দোলনে আমরা একমত হয়েছি এবং সেই আন্দোলন শুরু করেছি। সে আন্দোলন এখনো চলছে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। এই ৩১ দফায় এ দেশের মানুষের প্রত্যকের কথা বলা আছে, রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের কথা বলা আছে। সে আন্দোলন নিঃসন্দেহে আরও বেগবান হবে অতি শিগগির।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি শুধু একটা অনুরোধ করব, আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না, যাতে কখনো ঐক্যে বিনষ্ট হয়। সবাইকে নিয়ে আসতে হবে। এখন আমাদের প্রধান শত্রু তো তারা, যারা আমাদের সবকিছু কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারের দূরে সরানোর জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, ২৩ জুন আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পালন করতে যাচ্ছে। ৭৫ বছরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের ভোটের অধিকার, অবাধ বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। ৭ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। জবরদস্তি করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে তারা ক্ষমতায় এসেছে।

সাইফুল হক বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে যে গণঐক্য সৃষ্টি হয়েছে, এই গণঐক্যকে রাজপথে কর্মসূচি আকারে ভবিষ্যতে আমরা আমাদের বোঝাপড়া আরও বাড়াব। যে ব্যবস্থা আওয়ামী লীগকে একটা ফ্যাসিবাদী দলে পরিণত করে, বেনজীর-আজিজকে জন্ম দেয়, সেই ব্যবস্থার রূপান্তরে সংস্কারের যে লড়াই, সে লড়াইয়ে ঐক্য বাড়িয়ে দেশকে রক্ষা করব।’

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, তথাকথিত নিরাপত্তার নামে সর্বগ্রাসী প্রতিবেশী বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিনাশ করে একটি পুতুল সরকার ক্ষমতায় বসিয়েছে। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতির সঙ্গে মিলিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলন কৌশল ঠিক করার আহ্বান জানান।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) বিগত আন্দোলনে ঢাকায় লাখো মানুষের দুটি মহাসমাবেশে পণ্ড করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ৯৫ ভাগ মানুষ। আপনাকে ভাবতে হবে, আমি এখন কোন পথ নেব। আপনি কি আবার যে প্রক্রিয়া চলছে যে রকম করে, সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যাবেন? মানে সরকার যেভাবে নির্বাচন করে ইত্যাদি ইত্যাদি..., অনেকে বোঝাতে চেষ্টা করছে দেখো, ভারতে কী রকম করে কংগ্রেস ফিরে এল। বিএনপি ফিরে আসতে পারে না?’

মান্না বলেন, বিএনপি ওভাবে ফিরে আসতে পারে না। কারণ, এটা বাংলাদেশ, এটা ভারত নয়, এখানে গণতন্ত্র নেই।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বিচার অঙ্গনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যত দিন যাবে, তাদের স্বরূপ আমরা আরও দেখতে পাব; কিন্তু আমরা আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে চাই না।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অতীতে যে ব্যাকরণে এ দেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলেছে, রাষ্ট্রের চরিত্র নতুন ব্যাকরণে আসার কারণে সংগ্রামেরও নতুন ব্যাকরণ দরকার। এটা আমাদের কেউ লিখে দেবে না। সংগ্রামের ভেতর থেকে আমাদের নতুন ব্যাকরণ তৈরি করতে হবে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, দেশের অনেক সমস্যার মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভারতীয় আধিপত্যবাদ। তিনি সবাইকে ভারত হটাও আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খানের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ, এবি পার্টির এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, ইসলামী আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাগপার রাশেদ প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী প্রমুখ।