আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কে ‘বরফ গলতে শুরু করেছে’ বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার এএনআই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগে দুই দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি শেখ হাসিনার আমলে গত ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের হওয়া কিছু উদ্যোগ ও চুক্তির বিষয়ে সমালোচনা করে আসছে।
সম্প্রতি ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে দলটির কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। এটাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এএনআইকে মির্জা ফখরুল বলেছেন, প্রণয় ভার্মার বিএনপি কার্যালয়ে এসে বৈঠক করাটা দুই দেশের জন্য অনেক ইতিবাচক দিকের দ্বার উন্মোচন করেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনের পর থেকে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে একটি প্রশ্ন ছিল। তবে এবার হাইকমিশনারের আমাদের কার্যালয়ে আসাটা অবশ্যই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটিয়েছে। বরফ গলতে শুরু করেছে।’
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। মির্জা ফখরুল এএনআইকে বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের সব সময় খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। অবশ্যই এটা ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে বাঁকবদলের একটি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, তাঁর দল ভারতকে আশ্বস্ত করেছে যে তারা ক্ষমতায় এলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোকে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করার সুযোগ দেবে না। অতীতে উত্তর–পূর্ব ভারতের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। একই সঙ্গে ভারতের প্রধান বিষয় হলো নিরাপত্তা সমস্যা। আমরা আশ্বস্ত করেছি যে আমরা যদি ক্ষমতায় থাকি তাহলে আমরা এটা নিশ্চিত করব যে এ দেশের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হবে না।’
সব সময় বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল এএনআইকে বলেন, ‘কিন্তু বিএনপি ও ভারতের সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভুল–বোঝাবুঝি ছিল। আমি মনে করি, বরফ গলতে শুরু করেছে। আমি আশা করি, এবার এটা (সম্পর্ক) আরও ভালো হবে। তারা (ভারত) আমাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে। আমরা এটা বিশেষ করে আবারও বলেছি যে ভারতের এ দেশের মানুষের মানসিকতা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। তাদের “সব ডিম এক ঝুড়িতে’ রাখা উচিত নয়। তাদের উচিত জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক উন্নয়ন করা।’
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে।
এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অবশ্যই এটা খুব উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে পরিবর্তনের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টার জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক খুবই উল্লেখযোগ্য এবং এটা গুরুত্বপূর্ণও। আমরা বিশ্বাস করি, এই বৈঠকের পর সম্পর্ক জোরদার হবে।’
ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সহযোগিতা জোরালো হতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কই আসল।’
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলটি বিশ্বাস করে যে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফিরে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া উচিত।
মির্জা ফখরুল এএনআইকে বলেন, ‘আমি জানি না, এখনো সরকার তাঁকে (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করেছে কি না। তবে আমি মনে করি, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, সেগুলোর মুখোমুখি হতে ফেরত আসা উচিত এবং তাঁর জবাবদিহির আওতায় আসা উচিত।’
পূজা উপলক্ষে হিন্দুদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায় গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বলে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে বলে আমি মনে করি না। প্রতিবার ক্ষমতার পরিবর্তনের পর কিছু সমস্যা হয়। এসব সমস্যা রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক নয়। কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর সবই রাজনৈতিক কারণে, সাম্প্রদায়িক কারণে নয়। তবে আমরা দেশের সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিয়ে খুবই সতর্ক। বিশেষ করে পূজার আগে। আমরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশজুড়ে আমাদের সব ইউনিটের নেতা–কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।’