উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে যাওয়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে পথে পথে হাজার হাজার নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছিলেন। গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাতে তাঁর আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
খালেদা জিয়া গতকাল মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে গুলশানের বাসা থেকে ক্রিম রঙের একটি গাড়িতে করে রওনা দেন বিমানবন্দরের উদ্দেশে। রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে তিনি বিমানবন্দরে পৌঁছান।
গুলশান থেকে বিমানবন্দর সড়কের যাত্রাপথে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগানে নেত্রীকে বিদায় জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত আটটার কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়া ‘ফিরোজা’র দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামেন। পরিবারের সদস্যরা একটি হুইলচেয়ারে বসিয়ে ধরে তাঁকে নিচে নামান। এ সময় সেখানে উপস্থিত নেতারা দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন।
সেখানে উপস্থিত বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় সহপ্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আক্তার রানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) খুবই স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন। “সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন”—ম্যাডাম বারবার এ কথাটাই বলেছেন।’
কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশযাত্রার আগমুহূর্তে খালেদা জিয়া প্রাণবন্ত ছিলেন। দলের একজন নেত্রীকে দেখে তিনি বলেন, ‘তোমার ছেলের বিয়ের খাবার আমি খেয়েছি।’
এ সময় মহিলা দলের নেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাবেক নেত্রী শিরিন সুলতানা, রেহানা আক্তার, শামা ওবায়েদ, আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, হাবিব উন নবী খানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিদায় জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তখন কয়েক হাজার নেতা–কর্মী ও সমর্থক ফিরোজার সামনে অপেক্ষমাণ ছিলেন।
ভিড় ঠেলেই খালেদা জিয়া বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেন। ফিরোজা থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর হয়ে বনানী ক্রসিং পর্যন্ত যেতেই প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। গুলশান থেকে শুরু বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের কোথাও এক পাশে, কোথাও দুই পাশে সারি বেঁধে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক দাঁড়িয়েছিলেন।
তবে বনানী ক্রসিং থেকে র্যাডিসন হোটেলের আগপর্যন্ত নেতা–কর্মীদের উপস্থিতি কম ছিল। এ সময় বিমানবন্দর থেকে ঢাকামুখী সড়কের একপাশ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শত শত যাত্রীকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়ার যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন রাখতে বনানী ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর সড়কের যানবাহন আটকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যানবাহনও আটকে আটকে দেওয়া হয়। ফলে বিমানবন্দর সড়কের উভয় পথে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিএনপির নির্দেশনা ছিল, খালেদা জিয়ার যাত্রাপথে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি যাতে না হয়, সে জন্য নেতা–কর্মীরা ফুটপাতে দাঁড়াবেন। কিন্তু তা মানা হয়নি। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খান। সেনাসদস্যদেরও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে দেখা যায়।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের আগে নেতা–কর্মীদের একটি দল মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে এগোতে থাকেন। পেছনে ছিলেন খালেদা জিয়া ও তাঁর সফরসঙ্গীরা। নেতা–কর্মীরা ‘গর্ব মোদের আলাদা, নেত্রী মোদের খালেদা’, ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ নানা স্লোগান দেন।
পথে পথে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা ব্যানার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান। অনেক ব্যানারে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সফলতা কামনা করে লেখা হয়, ‘সেরে উঠুক বাংলাদেশ, সেরে উঠুক গণতন্ত্র’।
পথে পথে নেতা–কর্মীদের বিদায় অভিবাদনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে আগে থেকেই ভিআইপি লাউঞ্জে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সিভিল এভিয়েশনের একটি গাড়িতে করে ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাতারের আমিরের পাঠানো রাজকীয় অ্যাম্বুলেন্সের কাছে নেওয়া হয়। সবাই দলের চেয়ারপারসনকে সেখানেই বিদায় জানান।
পরে রাত প্রায় ১২টার দিকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি দলের চেয়ারপারসনের দ্রুত আরোগ্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেন। একই সঙ্গে দলের নেতা–কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।