যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর পিসের (ইউএসআইপি) একটি প্রতিনিধিদল আজ শুক্রবার ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধিদলটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আর বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে দলটির পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুক্রবার বিকেলে বৈঠকটি হয়। ইউএসআইপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বিকেল চারটার দিকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পৌঁছালে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক উপকমিটির সদস্য খালেদ মাসুদ আহমেদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএসআইপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন জেফরি ম্যাগডোনাল্ড, ডেন মার্কি ও ইশা গুপ্তা।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই উপমহাদেশের যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং তা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাচ্ছে, এসব বিষয়ে বাংলাদেশের কী ভূমিকা, আওয়ামী লীগ কী চিন্তা করছে, এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
শাম্মী আহমেদ আরও বলেন, তারা জানতে চেয়েছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? চীনের সঙ্গে কেমন? উপমহাদেশের দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কেমন, সেটাও জানতে চেয়েছে। তাঁরা বিষয়গুলো জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, আমাদের জাতির পিতা যেটা দিয়ে গেছেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব—কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, এটাই ফোকাস করা হয়েছে।’
শাম্মী আহমেদ আরও বলেন, চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা জানতে চেয়েছেন। তাঁরা নিজেরাও স্বীকার করেছেন যে চীন একটি অর্থনৈতিক শক্তি। চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অংশীদার। তিনি ভারতের বিষয়ে বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি, ইন্ডিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের দুর্দিন ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে আমাদের পাশে ছিল, সেটাকে আমরা সম্মানের চোখে দেখি।’
ভারতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘ভারতের হিন্দুত্ববাদের জাগরণ নিয়ে তাঁরা একটা প্রশ্ন করেছেন। আমরা উত্তর দিয়েছি—আমরা কারও ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা কারও ইন্টারনাল ব্যাপারে কথা বলি না। আমরা অন্য দেশের মতবাদকে সম্মান দিই। ইন্ডিয়ায় কী হচ্ছে না হচ্ছে, চীনে কী হচ্ছে না হচ্ছে, এটা তাদের দেশের জনগণের বিষয়। আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান শাম্মী আহমেদ। তিনি বলেন, তাঁরা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠক
ঢাকার বনানী এলাকার এক হোটেলে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ইউএসআইপির প্রতিনিধি দল। আজ সন্ধ্যার পর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ প্রথম আলোকে জানান, দল হিসেবে বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কী, চলমান ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে দলটির অবস্থান এবং কৌশল সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল ইউএসআইপির প্রতিনিধি দল।
শামা ওবায়েদ আরো জানিয়েছেন, তাঁরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের শাসনামল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সরকারের সময়ের পররাষ্ট্রনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। এখন বিএনপি যে কৌশল নিয়ে চলছে, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যেভাবে ভাবছে, তা–ও তাঁরা ওই প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থানের বিষয়টি ছাড়াও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও তাঁরা কথা বলেছেন।
বৈঠকের অংশ নেওয়া বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, চীন ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও বিএনপির মনোভাব জানতে চেয়েছিল ইউএসআইপির প্রতিনিধি দল।
শামা ওবায়েদ ছাড়াও বিএনপির পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল।