বিদেশে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং কারা কারা অর্থ পাচার করেছেন, বিদেশে বাড়ি কিনেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। আজ সোমবার বিকেলে সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনজন সংসদ সদস্য এ দাবি তোলেন।
সম্পূরক বাজেটে ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বরাদ্দ বেড়েছে ৩৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। সম্পূরক বাজেটে ২০টি মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে ৬৬টি ছাঁটাই প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির দুজন এবং দুজন স্বতন্ত্র মিলিয়ে চারজন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের জন্য সম্পূরক বাজেটে ৪৯৫ কোটি ৫২ লাখ ২৯ হাজার টাকা অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। এ দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক বলেন, ডলার–সংকটের বড় কারণ অর্থ পাচার। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা যে–ই হোক, যাঁরা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকায় বাড়ি, হোটেল করেছেন, তদন্ত করে তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। টাকা ফিরিয়ে আনা গেলেও তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে।
আগের অর্থমন্ত্রী (আ হ ম মুস্তফা কামাল) কোনো কথা শুনতেন না—এমন দাবি করে আর্থিক খাতে অনিয়ম বন্ধ করার জন্য বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মুজিবুল হক।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বড় কাজ হলো ব্যাংক খাত তদারক করা। তিনি প্রশ্ন রাখেন, জনগণের টাকা যে লুটপাট হচ্ছে, ব্যাংকে অনিয়ম হচ্ছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বা বাংলাদেশ ব্যাংক কি সুপারভাইজ (তদারকি) করছে? পি কে হালদার হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন, বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঋণ নেয়, পরে তাদের সুদ মওকুফ করা হয়, এসবের জবাব কি অর্থমন্ত্রী দিতে পারবেন?
মুজিবুল হক বলেন, ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে, অথচ ৫০ হাজার টাকার জন্য কৃষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি ব্যাংকের মালিকের শত কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে এখানে টাকা খরচ করা কেন, সে প্রশ্নও তোলেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।
ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, টাকা পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে। ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কেন অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করেছে, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। অর্থমন্ত্রী সৎ ও অভিজ্ঞ। অতীতে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশে লুটপাট করে যাঁরা অর্থ পাচার করেছেন, তাঁদের সে অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সংসদ সদস্যদের সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনিয়মের যেসব কথা বলা হয়েছে, সেগুলো অনেকটা ঢালাও।
পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়।
‘আর্নিং অ্যান্ড লার্নিং’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের জন্য ১৪ কোটি ২৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত মঞ্জুরি দাবি করা হয়।
এ দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক। আইসিটি বিভাগের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে চলছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ প্রকল্পে যাঁরা লার্নিং করতে আসেন, তাঁরা সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারেন না। এখানে অপব্যয় হচ্ছে।
যশোরে আইসিটি পার্কে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে মুজিবুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নামে আইসিটি পার্ক করেছেন, সেখানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট, বিয়ের অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান কী করে হয়?
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, ‘কাজ যে হচ্ছে না, তা ঠিক নয়, কাজ হচ্ছে। তবে দোয়েলের বাক্স খুললে যদি চায়নিজ কম্পিউটার পাওয়া যায়, তাহলে এটা কি অপচয়, না দুর্নীতি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাটা কী নিয়েছেন, তা সংসদ জানতে চায়।’
পংকজ নাথ বলেন, ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের নামে যে কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে, তাতে কি আদৌ কাজ হচ্ছে, নাকি জং ধরে গেছে? আপনি (আইসিটি প্রতিমন্ত্রী) আপনার নির্বাচনী এলাকায় খোঁজ নেন। ডাক বিভাগের আধুনিকায়নের নামে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে?’