জনসমর্থনহীন বর্তমান সরকারের বাজেট করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। তারা লুটপাট, টাকা পাচার করে দেশকে ফতুর করে ফেলেছে। এদের কবল থেকে দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার গণ-আন্দোলন করতে হবে।
বাজেট নিয়ে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাজেট ২০২৪-২৫: নৈতিকতাহীন অর্থনীতির সালতামামি’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাগরিক ঐক্যের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সেমিনারে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
সেমিনারে সভাপতির পক্ষে বাজেট নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সম্পাদক জাহেদ উর রহমান। বাজেটকে তিনি তৈলাক্ত বাঁশের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, দীর্ঘ সময়ের অপশাসন ও লুটপাটের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গভীর খাদে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট অর্থনীতিকে স্বস্তি দিতে পারবে না। অর্থাৎ এই তৈলাক্ত বাঁশটি বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। বাজেটের কর আরোপ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানো, কালোটাকা সাদা করা, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি ঋণ—এসব বিভিন্ন খাত নিয়ে তিনি তার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের কাছ থেকে জনকল্যাণকর বাজেট পাওয়া যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার দেশকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করে দিয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে বিদেশে পালিয়েছেন। সাবেক সেনাপ্রধানের নামে দুর্নীতির অভিযোগ। সাবেক পুলিশপ্রধান দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নিখোঁজ। এই সরকারের সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আছে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ। সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে উঠেছে চোরাচালানের অভিযোগ। আর সরকারের বিরুদ্ধে ভোটবিহীন ভোটারবিহীন নির্বাচনের অভিযোগ তো আছেই। কাজেই এই সরকারে বাজেট করার কোনো নৈতিক অধিকারই নেই। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেই সব মুষ্টিমেয় লোক, যারা তাদের টিকিয়ে রেখেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্য, টাকার মান পড়ে যাচ্ছে। মেগা প্রকল্পের নামে চলছে মেগা দুর্নীতি। সরকার আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে আজিজ-বেনজীর সৃষ্টি করছে। ‘শ্রীলঙ্কান সিনড্রোম’ দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এই বাজেট কোনো দিকনির্দেশনা দিতে পারে না। এখান থেকে বাঁচার জন্য আন্দোলন আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ব্যাংক থেকে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে দিচ্ছে, তাদের কিছুই হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা হারিয়ে লুটেরাদের সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান বলেন, এত ব্যাপকভাবে দুর্নীতি, লুটপাট ও সেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে যে রাষ্ট্র দেউলিয়ায় পরিণত হতে চলেছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, বাজেটে সরকার নিজেই অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার করেছে। তাদের উন্নয়নের ফানুস কীভাবে কীভাবে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে, তা আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে ।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, বাজেটে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতের বরাদ্দ কমিয়ে আনা হচ্ছে। আর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়ে সরকার জাতিকে নৈতিকভাবে দুর্নীতিবাজ করে তুলতে অনুপ্রাণিত করছে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ, সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরী, বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী, গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক (একাংশ) কর্নেল (অব). মিয়া মসিউজ্জামান, অহিংস অভ্যুত্থান বাংলাদেশের মুখপাত্র আবুল বাশার ও সাংবাদিক মোস্তাফা কামাল মজুমদার। সঞ্চালনা করেন নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।