বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দেবে

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ শুরু করেছেন এবং তাঁরা প্রথমেই যে কাজগুলো শুরু করেছেন, তা গোটা জাতির কাছে আশার সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘গণহত্যা’র বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্তসহ দলীয় কয়েকটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত আন্দোলনে বিজয়ের আগে আওয়ামী লীগ সরকার তার বাহিনী দিয়ে নৃশংসভাবে যে গণহত্যা করেছে, জাতিসংঘের উদ্বেগ ছিল সবচেয়ে বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বিষয়ে জাতিসংঘের একটা নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে আমরা চিঠি পাঠাব। এটাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রধান উপদেষ্টাকে (অধ্যাপক ড. ইউনূস) চিঠি দেব। একই সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫৭ জন শ্রমিককে বন্দী করা হয়েছে আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ার জন্য। তাঁদের মুক্তির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নিতে আমরা চিঠি দেব।’

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সমস্যাসংকুল একটি পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত পরশু সন্ধ্যায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়েছে। এত বড় একটি বিপ্লবের পর কিছু কিছু সমস্যা থাকতেই পারে। যেখানে এমন একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে এটাকে পূর্ণ স্বাভাবিকে নিয়ে আসা এত সহজ নয়। স্বাভাবিকভাবে, এটা সময়ের ব্যাপার। এ কাজগুলো খুব দ্রুততার ও আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই করার চেষ্টা করছেন। আপনারা জানেন, অতি দ্রুত তাঁরা পরিস্থিত স্বাভাবিক করার জন্য কাজ শুরু করেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ছয়জন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। আমরা মনে করি, গণতন্ত্রের জন্য এটাও একটা সুখবর। যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বিচার বিভাগে, সেটা অনেকাংশে মুক্ত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা দেশি ও বিদেশি গণমাধ্যম বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়েছি যে দেশের ও বিদেশের কিছু কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা তুলে ধরেছে; যা আমরা মনে করি, একেবারেই সঠিক নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

ফখরুল দাবি করেন, এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে বিএনপি তো জড়িত নয়ই, বাংলাদেশের সুস্থ-স্বাভাবিক কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন না। এটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশে নতুন করে অর্জিত স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার একটা চক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে মানুষ বিভ্রান্ত হন এবং অর্জিত বিজয় ব্যাহত হয়। এমন সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা ও জয়নাল আবেদীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।