জাতীয় বাজেটের ওপর সংসদে সাধারণ আলোচনায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার পক্ষে–বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন সংসদ সদস্যরা।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে আর অসৎদের উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। অন্যদিকে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আরও সহজ করার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দীন বলেন, এর আগেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কেউ টাকা সাদা করেননি। ১৫ শতাংশ কর দিতে হলে কেউ অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করবেন না। তবে এটি ৫ শতাংশ করা হলে বিপুল অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করবেন মানুষ।
স্বতন্ত্র এই সংসদ সদস্য বলেন, দেশে উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিও বেড়ে গেছে। দুর্নীতির লাগাম টানা না গেলে উন্নয়ন ধরে রাখা যাবে না। দেশ বাঁচাতে হলে দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে। ব্যাংকে দুর্নীতি বেড়ে গেছে। ব্যাংকের পদস্থ কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। উদাহরণ হিসেবে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাইয়ের কথা বলা যায়। তিনি হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। তাঁর বিচার হয়নি।
তারল্য সংকটের কারণে ব্যাংকে টাকা নেই, এমন দাবি করে সোহরাব উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে কিছু দুর্বল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা এখনো কার্যকর হয়নি। গ্রাহকেরা টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও ব্যাংকের নাম প্রকাশ করার কারণে ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন বলেন, কিছু ব্যক্তি পুঁজিবাজারে এসে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে চলে গেছেন। তাঁরা পরিচিত মুখ। পুঁজিবাজার নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এতে সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত এবং যাঁরা কর দেন না, কালোটাকার মালিক, তাঁদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এটি কোন বিবেচনায় যুক্তিসঙ্গত?
মাসুদ উদ্দিন বলেন, কালোটাকা দুই রকম। একটা বেশি কালো আরেকটা কিছুটা কম কালো। যেটা অর্জনের রাস্তা বৈধ, কিন্তু কর দেয়নি, সেটা কর দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া যায়। কিন্তু যেটার অর্জনের রাস্তাই অবৈধ, সেটাকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে বৈধতা যদি দিতেই হয়, তাহলে করের পাশাপাশি জরিমানা ও বিনিয়োগের শর্ত দিয়ে তা করা যেতে পারে।
জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত সংসদ সদস্য দাবি করেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। তার অংশ হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতি এখন চরম চাপে। এ বিষয়ে সমাধান তো দূরের কথা, এ বিষয়ে বাজেটে আলোচনাই করা হয়নি।