বর্তমান কাঠামোতে রাষ্ট্র চলছে না, এর পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারকাজ হাতে নিয়েছে, তা সময়সাপেক্ষ। জনগণের অনুমোদন, সমর্থন ছাড়া সংস্কার সম্ভব হবে না। তাই নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয়, রাষ্ট্র পরিবর্তনের কাজও তত তাড়াতাড়ি হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথাগুলো বলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে জেএসডি।
বিএনপি কেন দ্রুত নির্বাচন চায়, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণকে রিপ্রেজেন্ট (প্রতিনিধিত্ব) আর কেউ–ই সেভাবে করতে পারে না। সে জন্য তিনি মনে করেন, সংস্কার করতে হলে জনগণকে লাগবে। তাঁদের দিয়েই সংসদে সেগুলো অনুমোদন করাতে হবে। তাঁরা কথা বলবেন, বিতর্ক করবেন, পাশ করবেন এবং তাঁদেরকেই সেটা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করতে হবে। সুতরাং নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয়, রাষ্ট্র পরিবর্তনের কাজটাও তত তাড়াতাড়ি হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, বিপ্লব ব্যর্থ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবিদাওয়া শুরু হয়েছে। এই দাবিদাওয়া তো আগে কেউ করেনি, এখন নিয়ে আসছে।
বিএনপি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল, কোনো বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয় উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উদার গণতন্ত্র চাই—এটাই দলের মূল কথা। সে কারণে কেউ যদি মনে করেন, বিএনপি রাতারাতি বিপ্লবী হয়ে যাবে, এটা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুন্দরভাবে চালু করতে পারলে সেখানেই একটা ভালো অবস্থার সৃষ্টি হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সবাই শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে। তিনি সফল হবেন। তাঁর সুনাম রক্ষা করার জন্য নিজেই সচেতন থেকে সব কাজ করবেন।
তারপরও উদ্বেগ কাজ করে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কখন উদ্বিগ্ন হই, যখন ওইখানেই (অন্তর্বর্তী সরকারে) কিছু খটকা লাগে।’ তাঁর আশা, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা উপদেষ্টারা এমন কোনো কথা বলবেন না বা কাজ করবেন না, যাতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বের মেয়াদ সংবিধানে যে পাঁচ বছর আছে, তা চার বছর হওয়া উচিত।
এই উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তো তাঁর (হাসান আরিফ) বলার কথা নয়। সরকার তো কমিশন তৈরি করেছে, সেই কমিশন প্রস্তাব দেবে, জনগণ প্রস্তাব গ্রহণ করবে। তারপরে না চার বছর না পাঁচ বছর সেটা সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাজারের অবস্থাটা খুব ভালো নয়। চাল, ডাল, তেল, লবণের দাম বেশ বেড়ে গেছে। রাজনীতিবিদেরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলছেন না। এটা নিয়েও কথা বলা উচিত। সরকারকে বিব্রত করতে নয়। সিন্ডিকেট করে যারা টাকা লুট করে নিয়ে চায়, সেখানে অবশ্যই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, একাত্তর সাল থেকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব সময় একসঙ্গে কাজ করে আসছে। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, একটি সম্প্রদায়ের মানুষদের সংগঠিত করে, ঐক্যবদ্ধ করে একটা বড় রকমের আন্দোলন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যা ভারতের যে বক্তব্য বাংলাদেশের বিপ্লব সম্পর্কে, তার সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়। রাজনীতিবিদদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ক্ষমা নেই’ বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি মনে করেন, সংস্কার না করে দলীয় শাসন কায়েম করতে চাইলে দেশে আবার ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কী ধরনের সংস্কার চায়, তার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। রাজনৈতিক সংকট রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে।
অভ্যুত্থান এখনো স্বস্তি দিতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এর কারণ হিসেবে বাজারে ‘আগুন’, জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকা, নানা ধরনের অস্থিতিশীল আচরণ বিরাজ করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি মনে করেন, এখনো ফ্যাসিস্ট ক্ষমতাকাঠামো রয়ে গেছে। এই কাঠামো না বদলালে সামনে দেশে আর গণতন্ত্র আসবে না।
জেএসডির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলামসহ অনেকে বক্তব্য দেন।